অসাংগঠনিক কর্মকান্ডে বিশৃঙ্খল সংগঠন নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদল!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

২০১৩ সালের পর নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের কমিটি দুটি কমিটি গঠন করা হলেও থানা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি কোন কমিটির নেতারাই। পূর্বের আহ্বায়ক কমিটির পর পরবর্তীতে ১২ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি গঠন করা হলেও সেই কমিটির সভাপতি মশিউর রহমান রনি ও সেক্রেটারি খায়রুল ইসলাম সজীবও নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা পুরণ করতে পারেনি।

এক বছর পেরিয়ে গেলেও জেলা ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনও করতে পারেনি এই দুই নেতা। এমনকি থানা পর্যায়ের কোন কমিটিই দিতে পারেনি তারা। এর মধ্যে দুজনের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে বিরোধ বিভক্তি দ্বন্ধ মতপার্থক্য। সরাসরি দুটি ভাগে বিভক্ত এখন নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদল। সংগঠনটিতে নেই চেইন অব কমান্ড। অসাংগঠনিক কর্মকান্ডে সংগঠনটি  এখন বিশৃঙ্খল সংগঠনে পরিনত হয়েছে নারায়ণগঞ্জে।

৯ অক্টোবর বুধবার কেন্দ্র ঘোষিত বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচিতেও দেখা গেল নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের বিভক্তি। ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনিকে বাদ দিয়ে অধিকাংশ নেতারা অবস্থান নিয়েছেন সেক্রেটারি সজীবের বলয়ের পক্ষে। এর আগে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি ও সেক্রেটারি নির্বাচিত হওয়ার পর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারতেও জেলার সভাপতি ও সেক্রেটারি তাদের নিজেদের বলয়ের নেতাকর্মীরা পৃথকভাবে সেখানে গিয়েছেন।

এদিকে ১২ সদস্যের এই কমিটির মধ্যে ইতিমধ্যে দুচারজন নেতা পুরোদস্তর রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। কমিটি গঠনের পর সভাপতি ও সেক্রেটারি দুজনই কারাভোগ করেছেন। দুজনেরই যথেষ্ট ত্যাগ রয়েছে সংগঠন করতে গিয়ে। কিন্তু ব্যর্থতার দায়ভার নিয়েও তৃণমূল নেতাকর্মীদের চরম ক্ষোভ এখন তাদের উপর। থানা পর্যায়ের প্রতিটি নেতাকর্মী প্রত্যাশায় ছিলেন কমিটি গঠন করা হবে। অনেক নেতাকর্মী দীর্ঘদিন ছাত্রদলের রাজনীতি করলেও ছাত্রদলের সদস্য পদটিও ভাগ্যে জুটেনি তাদের। অনেকেই ছাত্রদলের রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে এখন অন্যান্য সংগঠনের দিকে দৌড়াচ্ছেন। অনেকেই ছাত্রদলের পদের আশায় বিয়ে করে সংসারও করেনি।

কমিটি গঠনের পর সাংগঠনিক নিয়ম মাফিক দুচারটি মিটিং করতেও দেখা যায়নি তাদের। বর্ধিত সভাও করতে পারেনি তারা। বলয় ভিত্তিক কমিটি গঠন করার চেষ্টা এবং ব্যক্তি স্বার্থের কারনে কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়েও আটকে গেছে বারংবার। সংগঠনের মধ্যে শৃঙ্খলা বলতে কিছু নেই এখন। সংগঠনের সভাপতি রনির নেতৃত্বের প্রতি অনীহা দেখা যাচ্ছে একাংশের নেতাদের। আবার দু’একজন রনির পক্ষেই রয়েছেন।

এরি মধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছিলেন রনি। সেখানে তিনি পরাজিত হওয়ার পর জেলা ছাত্রদলের অনেক নেতাকর্মীরাই এখন তার সঙ্গ থেকে সটকে পড়েছেন। কেউ কেউ স্বপ্ন দেখছেন সামনে রনিকে বাদ দিয়ে সজীবের হাতেই তুলে দেয়া হতে পারে জেলা ছাত্রদলের সভাপতির পদটিও। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে সজীব কেন্দ্রে যথেষ্ট চেষ্টাও করছেন বলেও জানাগেল। যদিও সজীব এ বিষয়ে এখনও মুখ খুলেননি সজীব।

সূত্রে জানাগেছে, ২০১৩ সালের ১৬ মার্চ মাসুকুল ইসলাম রাজীবকে আহ্বায়ক ও আনোয়ার সাদাত সায়েম, মাহাবুব রহমান, শাহ ফতেহ মোহাম্মদ রেজা রিপন, মশিউর রহমান রনি, মঞ্জুর হোসেন ও হারুন উর রশিদ মিঠুকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে গঠন করা হয় জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির। তারাও থানা পর্যায়ে কমিটি গঠন করতে পারেননি। এমনকি জেলা কমিটির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেননি।

ওই কমিটির পর গত বছরের ৫ জুন দুপুরে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুন অর রশিদ মামুন ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করেন।

এই কমিটিতে আগের আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মশিউর রহমান রনিকে সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতা আজহারুল ইসলাম মান্নানের ছেলে খায়রুল ইসলাম সজীবকে সাধারণ সম্পাদক করে ১২সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ এবং আরিফুর রহমান মানিককে সহ-সভাপতি, ইসমাইল মামুন, মেহেদী হাসান, মঈনুল ইসলাম রবিন, নাজমুল হাসান বাবু, মশিউর রহমান শান্ত, রাকিব হাসান রাজ, রফিকুল ইসলাম রফিককে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সোহেল মিয়া সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। এই ১২ জনের মধ্যে দু’চারজন রাজনীতিতেই নাই এখন।

এদিকে বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের ব্যানারে সোনারগাঁয়ের কাঁচপুুর এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জেলা ছাত্রদলের সেক্রেটারি খায়রুল ইসলাম সজীব। ৯ অক্টোবর বুধবার সকালে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও কাঁচপুর এলাকায় সজীবের নেতৃত্বে এ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন ছাত্রদলের একাংশের নেতাকর্মীরা।

তবে এই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন না নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান শান্ত। তারা একই সময়ে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাড়ায় জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের ব্যানারে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন।

সজীবের ওই কর্মসূচিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি আরিফুল ইসলাম মানিকের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন- জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল মামুন, মেহেদী হাসান, রাকিব হাসান রাজ, রফিকুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল মিয়া।

অন্যদিকে ৯ অক্টোবর বুধবার সকালে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাড়ায় জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের ব্যানারে বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এ বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। তবে এখানে জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের ব্যানারে কর্মসূচি পালন করা হলেও এখানে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান শান্ত ছাড়া আর কেউই উপস্থিত ছিলেন না।

এতে মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি শাহেদ আহমেদের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান শান্ত। বাকিরা সবাই মহানগর কমিটির নেতারা।

এ বিষয়ে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনি সান নারায়ণগঞ্জকে বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত হয়েছিল জেলা ও মহানগর ছাত্রদল একসঙ্গে এই কর্মসূচি পালন করব। কিন্তু জেলার সেক্রেটারি কেন আসলেন না সেটা বুঝতে পারছিনা। সেক্রেটারির সঙ্গে আমার কথাও হয়েছিল। তিনি কর্মসূচিতে না এসে সোনারগাঁয়ে কর্মসূচি পালন করেছেন। যতদুর জেনেছি তিনি তার এলাকার নেতাকর্মীদের নিয়ে কর্মসূচি পালন করেছেন। জেলা ছাত্রদলের ব্যানারে করেছে কিনা আমার জানা নেই।

তবে এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলে কোন দ্বন্ধ বিরোধ নেই দাবি করে জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক খায়রুল ইসলাম সজীব সান নারায়ণগঞ্জকে বলেন, আমরা আগের দিন ঢাকায় বসেছিলাম। সেখানে সকলের মতামতে সিদ্ধান্ত হয় কাঁচপুরে আমরা কর্মসূচিটি পালন করব। কারন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কর্মসূচি পালনের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। জেলা ছাত্রদল আমি একক সজীবের নয়। এটা সকলকে নিয়ে জেলা ছাত্রদল। সকলের মতামতেই কাঁচপুরে কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সন্ধার পর জানতে পারলাম সভাপতি মহানগর ছাত্রদলের সঙ্গে কর্মসূচি পালন করবেন। কিন্তু তার আগেই সকলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সকল নেতাকর্মীদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে কাচপুরে কর্মসূচি পালন করা হবে।

সজীব পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, চাষাড়া কি জেলার আওতাধীন নাকি মহানগরীর এলাকা? তাহলে তো জেলার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টেই কর্মসূচি পালন করা উচিত। যদি মহানগরীতে গিয়ে কর্মসূচি পালন করতে হয় তাহলে জেলা কমিটির দরকার ছিল কি? তাছাড়া আমি এককভাবে কোন সিদ্ধান্ত নেইনি।

তিনি আরও দাবি করেন, কর্মসূচির বিষয়ে যুগ্ম সম্পাদক রাকিব হাসান রাজকে দপ্তরের দায়িত্ব পালনের জন্য দেয়া হয়েছে। সে সকল নেতাকর্মীদের জানিয়ে দিয়েছেন। এখন সভাপতি সেখানে কর্মসূচি পালন করলে আমাদের কি করারই আছে?

অন্যদিকে এ বিষয়ে জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিব হাসান রাজ বলেন, আমরা কর্মসূচিটি কাঁচপুরেই নির্ধারণ করেছিলাম। কারন ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেইন পয়েন্ট এটি। কিন্তু সভাপতি তার নিজের ইচ্ছায় তিনি মহানগর ছাত্রদলের সঙ্গে কর্মসূচি পালন করেছেন। তার সঙ্গে একজন যুগ্ম সম্্পাদক ছাড়া আর কেউ নেই।

এ ছাড়াও অনেকটা একই কথা বলেন আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, কাঁচপুরে কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সভাপতি কেন আসলেন না সেটা তিনি বলতে পারবেন। উনার সঙ্গে আমাদের মতের মিল না হওয়ার কারনেই আমাদের সঙ্গে হয়তো আসেননি। বাকিটা তিনি বলতে পারবেন। আর চাষাড়া তো মহানগরীর এলাকা। সেখানে কেন জেলা কমিটি কর্মসূচি পালন করবে? আমরা জেলার আওতাধীন এলাকায় কর্মর্সুচি পালন করব।