সান নারায়ণগঞ্জ টুযেন্টিফোর ডটকম:
‘কথায় আছে,
এ জগতে হায় সেই বেশি চায়
আছে যার ভুরি ভুরি,
রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি’।
এ লাইনগুলো আমরা ভাবসম্প্রসারণে পড়েছি এবং এর গুরুত্বও অনুধাবন করতে পেরেছি। এর সাথে জড়িত একটা টুনটুনির গল্পও মনে আছে-যে গল্পে রাজা সম্পদশালী হওয়া সত্বেও টুনটুনির এক টাকার কুড়িয়ে পাওয়া মুদ্রাটি কেড়ে নেয় এবং টুনটুনিকে নিঃস্ব করে দেয়।
গল্পটিকে লেখক ব্যাঙ্গার্থক গল্প হিসেবে টুনটুনির চরিত্রটাই ফুটিয়ে তুলেছিলেন। মুলতঃ লেখকের লেখায় বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার করুণ চিত্রটি স্পষ্টত ফুটে উঠেছিল-যা লেখক অতি বিচক্ষণতার সাথে উপস্থাপন করেছিলেন।
আমরা জানি, অর্থশালী ও বিত্তবান মানুষগুলো আরো ও বিত্তশালী হবার লক্ষে যেকোন অসুদপায় বা কৌশল অবলম্বন করে সীমাহীন বিত্তের মালিক হতে চায়। যদিওবা তাদের যত সম্পদ আছে তা চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি। তবুও সম্পদ লাভের আকাঙ্খার শেষ নেই তাদের।
মানব জীবন বড় সংকটময়। বেঁচে থাকার জন্য মানুষকে সেসব সংকটাপন্ন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় সেসব সংকটের মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজন হয় বিত্তের। যা ছাড়া বেঁচে থাকা মুশকিল। সম্পদ বা বিত্ত এমন একটি প্রয়োজন যা বেশিও থাকতে নেই, আবার নিঃস্বও হতে নেই। মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সকল চাহিদা মেটাতে বিত্তের প্রয়োজনীয়তা অবিসম্ভাবী। কিন্তু সমাজে সকল মানুষের বিত্ত এক সমান হয় না। সমাজে কেউ কেউ থাকে বিপুল সম্পত্তিশালী আবার কেউবা একদমই বিত্তহীন। আর এই অসামঞ্জস্যতা তৈরি হয় বিভিন্ন কারনে। কারনগুলোর মধ্যে শক্তি, ক্ষমতা ও প্রভাব বিশেষভাবে উল্লেখ্যযোগ্য।
শক্তিকে যদি পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় ব্যাখ্যা করি, তবে দেখি যে শক্তি হচ্ছে কাজ করার সামর্থ্য। এটি পদার্থের এমন একটি বৈশিষ্ট্য যার সৃষ্টি বা ধ্বংস নেই কিন্তু রূপ পরিবর্তনের মাধ্যমে একবস্তু হতে অন্যবস্তুতে যেতে পারে। শক্তি তখনই প্রকাশ পায় যখন তা কাজের মাধ্যমে আসে। অর্থাৎ বস্তুর শক্তি হচ্ছে ঐ বস্তু যতটা কাজ করতে পারে। যখন কোন ব্যক্তি বা বস্তু শারীরিকভাবে দূর্বল বা অক্ষম থাকে তখন সেই ব্যক্তি বা বস্তুর মাঝে নিহিত শক্তি কোন কাজে আসে না। ফলে শক্তি দূর্বল হয়ে গিয়ে অকেজো হয়ে যায় এবং কাজ না করার কারনে মানুষগুলো হয় বিত্তহীন।
আবার ক্ষমতা এমন একটি শব্দ যা ক্ষেত্র বিশেষে শক্তি, সামর্থ্য ও দক্ষতাকে নির্দেশ করে। দৈনন্দিন জীবনে ক্ষমতা সাধারণত সিদ্বান্তত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের সাথে সম্পর্কিত। কাজের ধরণ অনুযায়ী কোন কাজ দ্রুত করা যায়, আবার কোন কাজ ধীরে করা হয়। ছাদে বসানো পানির ট্যাংকার যদি হাতে করে বালতিতে ভরে পূর্ণ করা হয়, তবে যে সময় লাগবে তা চেয়ে অনেক বেশি কম সময়ে তা পূর্ণ হবে বৈদ্যুতিক মোটরে। এই দুটো কাজে যে সময়ের ব্যবধান পরিলক্ষিত হয় তা ক্ষমতা।
আমাদের সমাজে নানা শ্রেণির নানা পেশার মানুষ রয়েছে। রয়েছে তাদের কাজ করার ধরনের ভিন্নতা। যার কাজে সুক্ষতা ও বুদ্ধিমত্তার সাথে সময়ের স্বল্পতা সংযোগ হবে তার ক্ষমতা বেশি। সুতরাং তার বিত্তশালী হবার সম্ভাবনাও বেশি।
মার্কিন বিজ্ঞানী এডুইন হলের মতে, কোন তড়িৎ পরিবাহীকে যখন কোন চৌম্বুকক্ষেত্রে স্থাপন করা হয় তখন পরিবাহীতে প্রবাহ এবং চৌম্বুকক্ষেত্রের উভয়দিকে সমকোণে একটি বিভব পার্থক্য সৃষ্টি হয়। এই পার্থক্যের অবস্থার মাধ্যমে প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। মুলকথা, সমাজে যার শক্তি ও ক্ষমতা যত বেশি সমাজে তার প্রভাব তত বেশি। আবার যার মাঝে শক্তিও ক্ষমতা কম তার প্রভাব তত কম। ফলে প্রভাবশালী হয়ে উঠে বিত্তবান আর প্রভাবহীন হয় গরিব। এ সমস্ত কারণগুলোর জন্য সমাজে কেউ সম্পদশালী আবার কেউবা নিঃস্ব।
এটাতো গেল শক্তি, ক্ষমতা ও প্রভাবের কারন। তাছাড়াও সমাজের ধনীরা তাদের সম্পদ গড়ার লক্ষে কিছু কৌশল অবলম্বন করে যা অত্যন্ত হীণমন্যতার পরিচয় বহন করে। ধনীরা তাদের ক্ষমতা, শক্তি ও কৌশলে সমাজের নিন্মবিত্তের মানুষদের ঠকায়। বল প্রয়োগে, প্রভাবিত করে, শোষণ করে, প্রতারণা ও প্রবঞ্চনার মাধ্যমে দরিদ্র শ্রেণির অর্থ সম্পদ কুক্ষিগত করে নিজেদের সম্পদের পাহাড় উঁচু করে তোলে। সম্পদের প্রাচীর যতই উঁচু হয় তাদের আকাঙ্খার প্রাচীরও তত উঁচু হয়। তাদের ক্ষুধা নিবৃত হয় না। এ ধরণের মানুষগুলোর শুধু চাই, চাই আর চাই।
অপরদিকে, অনাহারক্লিষ্ট দরিদ্র মানুষগুলো দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করে ও ধনীদের বিত্ত-বৈভবের দিকে তাকায় না। লোভাচিত্তে রাজরাজড়াদের বিলাশবহুল জীবনের খোঁজ তারা রাখেনা। তাদের ভাঙ্গা কুঁটিরে একবেলা-আধবেলা খেয়ে দিন পার করে দেয় আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করে।
পক্ষান্তরে, ধনীরা গরিবের এটুকু শান্তিও ছিনিয়ে নিতে তৎপর হয়ে উঠে। অতি লোভে চাতুরীপনায় তারা গরীবদের ভিটে মাটি, সামান্য জমিজিরাত ও গ্রাস করার পাঁয়তারায় ব্যস্ত থাকে। কৌশলে চুরি করা ধনে সম্পদের ভুরি ভুরি পাহাড় গড়ে তোলে।
লেখক: মীরা সুলতানা
সোনারগাঁও, নারায়ণগঞ্জ