ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় সোনারগাঁয়ের তিন রাজনীতিক!
সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ উপজেলায় আওয়ামীলীগ ও বিএনপির ৩ রাজনীতিককে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অভিযোগ তুলে তাদের সনদ বাতিলের দাবি করেছেন সোনারগাঁয়ের মুক্তিযোদ্ধারা। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তারা ভূয়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা আকারে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। যার শুনানি শুরু হয়েছে এবং চলমান।
এদিকে ১১ মার্চ সোমবার দুপুরে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সনদ বাতিলের দাবি সহ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক এক কমান্ডারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে সোনারগাঁ প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। এর আগে তারা সোনারগাঁও পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়নের ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
আরেকটি সূত্রে জানাগেছে, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় বিএনপির সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করিম, সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু জাফর ও আওয়ামীলীগ নেতা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেনের নাম রয়েছে।
তবে এ বিষয়ে নৌকার প্রার্থী মোশারফ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে মোশারফ হোসেন বলেন, সোনারগাঁয়ে যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন তাদের মধ্যে আমাদের পরিবারের নাম আসবে আগে। সাজেদ আলী মোক্তার আমার চাচা। আমি হাজার হাজার চিড়িকুঠ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং এ পাঠিয়েছি। আসলে শফিউর রহমান নামের একজনের সঙ্গে আমাদের জমি নিয়ে জামেলা চলছে। এখন সামনে নির্বাচন। যে কারনে এখন আমাকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা মাত্র।
এ বিষয়ে সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু জাফর বলেন, এখন যারাই করছে তারা সরকারি দল। তাদের মন চায় তারা তাই বলতে পারে, করতে পারে। এইযে ডাকসুর নির্বাচন। এটাও নিয়ে গেল জোর করে। এখন আমাদের তারা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বলবে এটাইও স্বাভাবিক। যদি প্রকৃতভাবে এলাকায় গিয়ে যাচাই বাছাই করা হয় তাহলেই তো প্রমান মিলে যায় কারা মুক্তিযুদ্ধ করেছিল। এখন প্রতিহিংসাবসত তাদের যা মন চায় তাই করছে তারা। আমরা এসব বিষয় নিয়ে ভাবি না। কারন আমি কখনও আমার সন্তানদের চাকুরীর জন্য কোটার জন্য যায়নি যাবোওনা। এমনকি ভাতাও আমি নেইনি। অনেকেই মুক্তিযুদ্ধ করেও সনদ নেয়নি। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। তবে এ বিষয়ে রেজাউল করিম সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
মুক্তিযোদ্ধারা আরও জানান, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে মন্ত্রনালয়ে অভিযোগ দাখিল করা হলে গত ২৬ ফেব্রুয়ারী প্রথম শুনানী অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং শুনানী চলমান। এসমস্ত ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর কাছে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা প্রমাণের জন্য দিশেহারা।
এদিকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের ভূয়া মুক্তিযোদ্ধাদেরকে তালিকা থেকে বাদ দেয়ার দাবিতে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন সোনারগাঁ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধাদের একাংশ। ১১মার্চ সোমবার দুপুরে সোনারগাঁ প্রেস ক্লাব কার্যালয়ে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মুক্তিযোদ্ধা মনিরুজ্জামান। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, দেশ স্বাধীনের পর সোনারগাঁয়ের ২শ’ ৯৩জন মুক্তিযোদ্ধা সরকারি গেজেটভূক্ত হন কিন্তু পরবর্তীতে যারা সোনারগাঁ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতৃত্ব দিয়েছেন পর্যায়ক্রমে তারা অর্থের বিনিময়ে অ-মুক্তিযোদ্ধাদেরকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করেন। বর্তমানে সোনারগাঁয়ে সরকারি ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৫শ’ ১৯জন।
বক্তব্যে আরো জানানো হয়, ভূয়া মুক্তিযোদ্ধাদ্ধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)’এ লিখিত অভিযোগ দেয়া হলেও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার ওসমান গণি মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর টেলিফোন অপারেটর মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেনের সহযোগিতায় সেই ফাইলটি গায়েব করার চেষ্টা করছেন। তাছাড়াও সাবেক ডেপুটি কমান্ডার ওসমান গণি যুদ্ধকালীন কোন গ্রুপেই কমান্ডার ছিলেন না কিন্তু উপজেলা মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয় স্তম্ভের ফলকে তার নামের শেষে গ্রুপ কমান্ডার লেখা হয়েছে। (সেসময় ২নং সেক্টরের গ্রুপ কমান্ডার হিসেবে দ্বায়ীত্বে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা শফিউর রহমান) সাংবাদিক সম্মেলনে এর তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়।
তিনি আরো বলেন, সাবেক ডেপুটি কমান্ডার ওসমান গণি স্বাধীনতা বিরোধী ও চিহ্নিত রাজাকারদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছেন। তিনি উপজেলার বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের নামে টাকা এনে আত্মসাত করেছেন। তাছাড়াও বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত রয়েছেন। এ ব্যাপারে সাবেক ডেপুটি কমান্ডার ওসমান গণির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ মিথ্যা। আমাকে হেয় করার জন্যই একটি পক্ষ এসব মিথ্যা অভিযোগ করছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন- সোনারগাঁ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রথম কমান্ডার ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান আহম্মেদ মোল্লা বাদশা, মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলম, আলতাফ হোসেন, শফিউর রহমান, সৈয়দ হোসেন, মফিজ মিয়া প্রমূখ।