দিনকাল নারায়ণগঞ্জ ডটকম:
নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী আলোচিত সমালোচিত সংসদ সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ-৪(ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী একেএম শামীম ওসমানকে নিজের অভিভাবক দাবি করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসনে আওয়ামীলীগের সাবেক সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত। একই সঙ্গে কায়সার হাসনাত বলেছেন, তিনি আমার চাচা, আমার অভিভাবক। আমাকে তিনি দোয়া দেন, চাইলেও দেন, না চাইলেও দেন।
গত ১৬ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ-৪(ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের বর্তমান এমপি ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী একেএম শামীম ওসমান সোনারগাঁয়ে এক সমাবশে বলেছিলেন, কায়সার হাসনাত কোন রাজাকার আলবদর পরিবারের সন্তান নয়। সে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির পরিবারের সন্তান। আমি আশা করব কায়সার হাসনাত লাঙ্গল প্রতীকে ভোট চাইবে। আমি চাইনা কায়সার হাসনাত আজীবনের জন্য আওয়ামীলীগ থেকে বহিস্কার হয়ে যাক। এমন বিষয়টি বৃহস্পতিবার দুপুরে সোনারগাঁয়ে কায়সার হাসনাতের এক সংবাদ সম্মেলনে উল্ল্যেখ করে কায়সার হাসনাতের দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে তিনি বলেন, শামীম ওসমান আমার অভিভাবক। তিনি আমার বাবা চাচার সাথে রাজনীতি করেছেন। তো আমাকে উনি ভাতিজা হিসেবে অনেক কিছুই বলতে পারেন এটা তার অধিকার। শাসন করতেও পারেন। তিনি আমাকে দোয়া দেন, দোয়া চাইলেও দেন, না চাইলেও দেন।’
২০ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরে সোনারগাঁও মোগরাপাড়া চৌরাস্তা এলাকায় উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে কেন তিনি নির্বাচন করছেন তার বিস্তারিত সাংবাদিকদের মাধ্যমে সোনারগাঁবাসীকে জানান কায়সার হাসনাত।
সোনারগাঁবাসীকে নির্বাচন সুষ্ঠ হবে বলে আশ্বস্থ করে কায়সার হাসনাত বলেন, কোন সন্ত্রাসীর হুমকি ধমকিতে নির্বাচন বিতর্কিত হবে না। এটা আমার নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা হতে দিবেন না। ৭১ সালে যুব সমাজ যুদ্ধ দেখেনি। এবার আগামী ৩০ ডিসেম্বর সেই যুদ্ধ আমরা দেখবো। সেটা হলো ভোট যুদ্ধ।
তিনি আরেক প্রশ্নে বলেন, ভোট দেয়ার মালিক জনগণ। কেউ যদি বলে থাকেন প্রশাসন ব্যবহার করে ভোট বাক্স লুট কিংবা সীল মেরে নির্বাচনে জয়ী হবেন সেটা সম্ভব নয়। এটা ভাবাটাই বোকামী। এটা কোনভাবেই সম্ভব নয়। যারা বাহিরে থেকে লোক এনে সোনারগাঁয়ে প্রভাব বিস্তার করতে চায় বুঝতে হবে সোনারগাঁয়ে তাদের কোন জনসমর্থন নাই।
নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত থাকবেন বলে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এখন থেকে আর কোন বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচার থাকবে না। কেউ কেউ অপপ্রচার করছিলেন আমি নির্বাচনে থাকবো কি থাকবোনা। যদি নির্বাচনে না থাকতাম তাহলে আজকে এই সংবাদ সম্মেলনেই ঘোষণা দিতাম। সুতরাং নির্বাচনে আমি থাকছি এবং শেষ পর্যন্ত।
তিনি বলেন, এতদিন ধরে কথা আসছে আমি নির্বাচন করছিনা, করব কিনা, বসে পড়ছি কিনা, শুয়ে পড়ছি কিনা। আমি যদি বলতাম তাহলে আজকেই বলতাম। আমি শুইনি বসিনি। আমি দাড়িয়েই আছি। এই নির্বাচন কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা নির্বাচনের পরেই আপনারা বুঝতে পারবেন। এই নির্বাচন সোনারগাঁবাসীর জন্য একটি মাইলফলক। আমি এমপি হওয়ার জন্য নির্বাচনে আসিনি। সোনারগাঁবাসীকে নিরাপত্তা দিতে আসছি।
নির্বাচন থেকে সরে দাড়াতে আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে কোন ধরনের চাপ রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে কায়সার হাসনাত বলেন, আমার উপর কোন ধরনের উচ্চ চাপ নাই, নি¤œচাপও নাই।
এর আগে কায়সার হাসনাত তার নির্বাচনে ‘আগামী ৫ বছর কেমন সোনারগাঁও দেখতে চাই’ এমন শ্লোগানে তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন বলে জানিয়ে বলেন, আমার প্রধান লক্ষ হলো সোনারগাঁবাসীকে নিরাপদ রাখতে চাই। সোনারগাঁয়ের মানুষকে নিরাপত্তা দিতে চাই। এটা আমার সোনারগাঁও নয় এটা আমাদের সোনারগাঁও। এখানে শান্তির মডেল হিসেবে সোনারগাঁকে গড়তে চেয়েছিলাম। সেই লক্ষ নিয়েই এবার নির্বাচনে দাড়িয়েছি।
এর আগে সংবাদ সম্মেলনে কায়সার হাসনাত সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য সাংবাদিক সমাজ, বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সহযোগীতা কামনা করেন। এবং সোনারগাঁবাসীর মাঝে দোয়া কামনা করে আগামী ৩০ ডিসেম্বর সিংহ প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করেন। এছাড়াও সোনারগাঁবাসীর জন্য কি কি কাজ করতে চান সেই সব বিষয় নিয়েও কথা বলেন। কথা বলেন নানা সমস্যা নিয়ে। তিনি গুরুত্ব দেন সোনারগাঁও হবে একটি পর্যটন নগরী।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশি মোশারফ হোসেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক সাবেক চেয়ারম্যান দেওয়ান উদ্দিন চুন্নু, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি গাজী মুজিবুর রহমান, সোনারগাঁ পৌরসভার প্যানেল মেয়র আলী আকবর, উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কোহিনুর ইসলাম, মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফ মাসুদ, সোনারগাঁ পৌরসভার দুই নারী কাউন্সিলর রীতা আক্তার, পারভীন আক্তার, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম, সাদিপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি সালাউদ্দিন মাসুম, পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আমির হোসেন, উপজেলা সোনারগাঁ পৌরসভা যুবলীগের সভাপতি আসাদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক ফায়জুল হাসান প্রমুখ।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে এ আসনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পান উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামীলীগ তার মহাজোটের শরীক দল জাতীয়পার্টিকে এ আসনটি ছেড়ে দিলে মোশারফ হোসেন মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নেন। মোশারফ হোসেন কায়সার হাসনাতের আপন চাচা। ওই নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় এমপি নির্বাচিত হন লিয়াকত হোসেন খোকা।
এবার মোশারফ হোসেনও মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন। মোশারফ হোসেন এখন মাঠে নেমেছেন ভাতিজা কায়সার হাসনাতের পক্ষে। মোশারফ হোসেন একটি সমাবেশে বলেছেন, এমপি খোকা আপনি বাড়ি গিয়ে ঘুমান। সোনারগাঁয়ে আপনার ১০ পারসেন্ট ভোটও নাই। আপনি ১০ পারসেন্ট ভোট পেলেই আমরা ধরে নিব আপনি এমপি হয়ে গেছেন। তাই খেলা বাদ দিয়ে বাড়ি গিয়ে ঘুমান। আপনি যে খেলা খেলতে চান সেই খেলা আমরা ৬০ বছর আগেই শেষ করে এসেছি।’
এ আসন থেকে জাতীয়পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশি ছিলেন এরশাদের পালিত মেয়ে ও কেন্দ্রীয়মহিলা পার্টির সাধারণ সম্পাদক অনন্যা হুসেইন মৌসুমী। তিনিও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন। তবে তার মনোনয়ন বাতিল হলে তিনি আপীল করেন। আপীলেও তার মনোনয়ন বাতিল করা হলে তিনি এখন আর নির্বাচনী আলোচনায় নেই। কারো পক্ষেই এখনও তিনি মাঠে নামেননি। সোনারগাঁও উপজেলা জাতীয়পার্টির সভাপতিও ছিলেন তিনি। গত ২০ নভেম্বর ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাজকে কেন্দ্র করে মৌসুমীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামাল দায়ের করে এমপি খোকা অনুগামী উপজেলা ছাত্র সমাজের সভাপতি ফজলুুল হক মাস্টার। ওই মামলার পর দিন সোনারগাঁও উপজেলা জাতীয়পার্টি থেকে মৌসুমীকে বাদ দিয়ে নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে জেলা জাতীয়পার্টি।