মনোনয়ন পায়নি বিএনপির হেভিওয়েট ও তিন সংস্কারবাদী
দিনকাল নারায়ণগঞ্জ ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ জেলার ৫টি সংসদীয় আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট। বিএনপি থেকে মনোনয়ন পায়নি বিএনপির দল ভাঙ্গার ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে অভিযুক্ত সাবেক তিন এমপি সহ বিএনপির অন্তত ৮ জন হেভিওয়েট প্রার্থী। এখানে দুটি আসনে রয়েছে জাতীয়পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের দুজন প্রার্থী যারা বর্তমানে এমপি। অন্যদিকে বিএনপিতে তিনটি আসনে প্রার্থী দিলেও একটি আসনে ছেড়ে দিয়েছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামকে ও আরেকটি আসনে নাগরিক ঐক্যকে। দলের দুটি বড় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। সেই সঙ্গে দুটি দলের নেতাকর্মীদের মাঝেও হতাশা ফুঠে ওঠেছে। অনেক হেভিওয়েট প্রার্থীরা মনোনিত হতে পারেননি। এর মধ্যে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির মধ্যে রয়েছে বিদ্রোহী প্রার্থীও।
জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলার ৫টি সংসদীয় আসনে ৬১ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছিলেন। যার মধ্যে ৪৭ জনের মনোনয়ন বৈধ ও ১৪ জনের মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করেছে নারায়ণগঞ্জ রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক রাব্বী মিয়া। বাতিলের মধ্যে রয়েছে বিএনপির মনোনিত প্রার্থী জেলা বিএনপির সেক্রেটারি অধ্যাপক মামুন মাহামুদ ও বিএনপির প্রার্থী মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ এবং গত নির্বাচনে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনিত প্রার্থী বর্তমানে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোশারফ হোসেন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন রয়েছেন। তবে ৫টি আসনের বর্তমান ৫ এমপির কারোরই মনোনয়ন বাতিল হয়নি। তারা ৫জনই আবারো মনোনিত হয়েছেন। তবে মনোনয়ন আপীল করে ফেরত পেয়েছেন মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন,মামুন মাহামুদ সহ ৭ জন।
নারায়ণগঞ্জ-১(রূপগঞ্জ) আসনের বর্তমান এমপি নৌকা প্রতীকে মনোনিত প্রার্থী গাজী গোলাম দস্তগীর। এখানে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির। প্রাথমিকভাবে চিঠি পেলেও চূড়ান্তভাবে মনোনয়ন পাননি বিএনপির মনোনিত প্রার্থী চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভুইয়া। এখানে নির্বাচনে রয়েছেন কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী মঞ্জুরুল ইসলাম চন্দন, স্বতন্ত্র হাবিবুর রহমান, ইমদাদ উল্লাহ, আজম খান। এখানে মোট ১০ জন মনোনয়ন পত্র দাখিল করেন। যাদের মধ্যে ৮ জনের মনোনয়ন বৈধ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী রেহেন আফজাল ও জাকের পার্টির প্রার্থী মাহফুজুর রহমানের মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করেন। তারা আপিলেও প্রার্থীতা ফিরে পাননি।
নারায়ণগঞ্জ-২(আড়াইহাজার) আসন থেকে আওয়ামীলীগের মনোনিত প্রার্থী বর্তমান এমপি নজরুল ইসলাম বাবু। এখানে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ। বিএনপির মনোনয়ন প্রাথমিকভাবে পেলেও বঞ্চিত হয়েছেন চাচা ভাতিজা বিএনপির মনোনিত প্রার্থী সাবেক এমপি আতাউর রহমান খান আঙ্গুর ও আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহমুদুর রহমান সুমন। নির্বাচনে রয়েছেন কমিউনিস্ট পাটির প্রার্থী হাফিজুল ইসলাম, জাকের পার্টির মুরাদ হোসেন জামাল, ইসলাম আন্দোলনের নাসির উদ্দীন।
নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসন থেকে জাতীয়পার্টির বর্তমান এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা। তাকে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য আজহারুল ইসলাম মান্নান। তবে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন পেলেও সোনারগাঁও বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু জাফর মনোনয়ন পত্রই দাখিল করেননি। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার, তরিকত ফেডারেশনের প্রার্থী মজিবুর রহমান মানিক, কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী আব্দুস সালাম বাবুল, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী সানাউল্লাহ নূরী, জেএসডির প্রার্থী ফখরুদ্দীন ইব্রাহীম, স্বতন্ত্র প্রার্থী মুরাদ হোসেন জামাল, জাকের পার্টির প্রার্থী মোস্তফা আমির ফয়সাল ও কল্যান পার্টির প্রার্থী রাশেদ ফেরদৌস। তবে বাতিল হওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মনোনিত হওয়া মোশারফ হোসেন ও এরশাদের পালিত মেয়ে অনন্যা হুসেইন মৌসুমীর মনোনয়ন আপীলেও বাতিল করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ-৪(ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের বর্তমান এমপি আওয়ামীলীগ মনোনিত প্রার্থী একেএম শামীম ওসমান। এখানে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের জেলার সভাপতি মুফতি মনির হোসেন কাসেমী। প্রাথমিকভাবে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য মুহাম্মদ শাহআলম ও জেলা বিএনপির সেক্রেটারি অধ্যাপক মামুন মাহামুদ। এখানে নির্বাচনে রয়েছেন বিএনপির বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন, জাতীয়পার্টির সালাউদ্দীন খোকা মোল্লা, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী শফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী হিমাংসু সাহা, ন্যাপের প্রার্থী ওয়াজিবুল্লাহ অজু, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের প্রার্থী সেলিম মাহামুদ, কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী ইকবাল মাহামুদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্র্টির প্রার্থী মাহামুদ হোসেন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের প্রার্থী জসিমউদ্দীন।
নারায়ণগঞ্জ-৫(শহর-বন্দর) আসনে জাতীয়পার্টির প্রার্থী বর্তমান এমপি একেএম সেলিম ওসমান। তাকেও মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি লাঙ্গল প্রতীকে লড়বেন। এখানে ধানের শীষ প্রতীকে লড়বেন নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা সাবেক এমপি এসএম আকরাম। এখানে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন বিএনপির সাবেক এমপি আবুল কালাম ও মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। তবে খোরশেদের মনোনয়ন বাতিল হলে তিনি আপিল করেননি। এখানে নির্বাচনে রয়েছেন খেলাফত মজলিসের প্রার্থী হাফেজ কবির হোসেন, সাম্যবাদী দলের প্রার্থী সাঈদ আহমেদ, বাসদের প্রার্থী আবু নাঈম খান বিপ্লব, কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী অ্যাডভোকেট মন্টু চন্দ্র ঘোষ, ইসলামিক ফ্রন্টের প্রার্থী বাহাদুর শাহ, জাকের পার্টির প্রার্থী হাসান জামাল, কল্যাণ পার্টির প্রার্থী আফতাব ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী আবুল কালাম।