আমি সেলিম ওসমান বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ছেড়ে কোথাও যাবো না। আওয়ামীলীগ ছাড়া কিছু বুঝি না। এই নারায়ণগঞ্জে আমার দাদার বাড়িতেই আওয়ামীলীগের জন্ম। তাই আগামীতে নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনে অবশ্যই নৌকা প্রতীকের প্রার্থী থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান।
৪ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় বন্দরে ২৬ নং ওয়ার্ডের সোনাচড়াস্থ আওয়ামীলীগ নেতা এমএ রশীদের বাসভবনে বন্দর থানা আওয়ামীলীগের নির্বাচনী মত বিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান বলেছেন, বন্দরে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা আমাকে যে ভালোবাসে তার প্রমান আমি এখানে এসে পেলাম। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি এককভাবে মনোয়ন পেয়েছি। আর বিএনপি এ আসন থেকে ৩জন প্রার্থীকে মনোয়নয়ন দিয়েছে। এ আসনে আমি কার সাথে নির্বাচন করব তা আমি এখনও জানিনা।
৪ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় বন্দরে ২৬নং ওয়ার্ডের সোনাচরা এলাকায় অবস্থিত বন্দর থানা আওয়ামীলীগ সভাপতি এম.এ রশীদ এর বাসভবনে বন্দর থানা আওয়ামীলীগ সহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে মত বিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এরআগে আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা তাদের বক্তব্যে বিগত দিনে তাদের হতাশা এবং না পাওয়ার কষ্ট তুলে ধরেন। যার মধ্যে থানা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি শফিউদ্দিন প্রধান বলেন, আমি শামসুজ্জোহা সাহেবের সাথে আওয়ামীলীগের রাজনীতি করেছি। অতীতে অনেক মামলার আসামী হয়েছি। কিন্তু বিগত সাড়ে ৪ বছরে আমি কিছুই পাইনি।
এছাড়াও অন্যান্য বক্তারা প্রায়ই একই রকম অভিযোগ তুলে ধরেন। যার মধ্যেই অধিকাংশই ব্যক্তিগত ভাবে কিছু না পাওয়ার বিষয়েই গুরুত্ব আরোপ করেন। অনেকেই আবার সাংগঠনিক কর্মকান্ড পরিচালনা করার জন্য বন্দরে আওয়ামীলীগের নিদিষ্ট কোন দলীয় কার্যালয় না থাকার ব্যাপারে আক্ষেপ প্রকাশ করে সেলিম ওসমানের কাছে বন্দরে আওয়ামীলীগের একটি কার্যালয়ের ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রস্তাব রাখেন। অনেকেই আবার কোন কিছু পাওয়ার না পাওয়ার কথা বলেননি। তারা শুধু নেতাকর্মীদের পিঠে যেন এমপি সেলিম ওসমান একটু হাত বুলান সেই আবদার রাখেন।
নেতৃবৃন্দদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এমপি সেলিম ওসমান বলেছেন, আমার বিরুদ্ধে করা আপনাদের অভিযোগ একেবারেই সত্য। গত সাড়ে ৪ বছরে সেলিম ওসমান কোন ব্যক্তির জন্য কিছুই করে নাই। কিন্তু সেলিম ওসমান কাজ করেছেন ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য, এলাকার অসহায় মানুষের জন্য, বন্দরের সাধারণ জনগনের জন্য, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য, বন্দর ও নবীগঞ্জ খেয়াঘাট দিয়ে যাতায়াতকারী বন্দরের লাখ লাখ মানুষের জন্য, বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য, সাধারণ জনগনের জন্যই শুধু সেলিম ওসমান বিগত সাড়ে ৪ বছর কাজ করে গেছেন।
আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের প্রসংশা করে তিনি বলেন, বন্দরে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা সহযোগীতা করে ছিল বলেই কদমরসুল কলেজ ও আলমচাঁন উচ্চ বিদ্যালয়কে সরকারীকরন করতে পেরেছি। বন্দর খেয়াঘাট দিয়ে ফ্রি যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে পেরেছি। নবীগঞ্জ-হাজীগঞ্জ ও ৫নংঘাট-ময়মনসিংহপট্টি দিয়ে পৃথক দুটি ফেরী সার্ভিস চালু করতে পেরেছি, বন্দর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ৫টি স্কুল নির্মাণ করতে পেরেছি। যার মধ্যে ৩ স্কুলেই বন্দরের সন্তানেরা সম্পূর্ন বিনা খরচে লেখাপড়া করতে পারছেন। লাঙ্গলবন্দে হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের অনুমোদন করতে পেরেছি। শীতলক্ষ্যা নদীতে মদনগঞ্জ দিয়ে নাসিম ওসমান সেতুর কাজ শুরু করতে পেরেছি। শান্তিরচরে ১৫০০ একর জমির উপর নীটপল্লী স্থাপনের কাজ শুরু করতে পেরেছি যেখানে প্রায় ২০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে এবং সেখানে বন্দরের স্থানীয়রাই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সুযোগ পাবে। আমার প্রতি কাজে আমার পাশে ছিলেন বন্দর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি এম.এ রশিদ ভাই এবং জাতীয় পার্টির আহবায়ক আবুল জাহের ভাই। গত সাড়ে ৪ বছর রশিদ ভাই প্রতিনিয়ত এলাকার মানুষদের জন্য একটা না একটা কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন। যার জন্য আপনাদের সহযোগীতায় এসব কিছু বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে। আমি গর্বিত যে আওয়ামীলীগের তৃনমূলের কর্মীরা নিজেদের জন্য কিছুই চান না। তাঁরা শুধু ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য, এলাকার উন্নয়ন আর দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যান। আমার শরীরে শেষ রক্ত বিন্দু থাকা পর্যন্ত আওয়ামীলীগের সাথে থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন-২০২১ এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার কাজ করে যাবো।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আপনারা বলছেন বন্দরে আওয়ামীলীগের কার্যালয় নাই। কিন্তু আপনারা কি বন্দর কিংবা শহরে জাতীয় পার্টির কোন কার্যালয় দেখাতে পারবেন? আপনারা আমাকে জায়গা দেন আমি আপনাদের অবশ্যই একটি আধুনিক কার্যালয় করে দেওয়ার ব্যবস্থা করবো।
সেলিম ওসমান আরো বলেন, গত সাড়ে ৪ বছরে বন্দরে আমি আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি কিছুই দেখি নাই। আমি শুধু দেখেছি কিভাবে বন্দরের উন্নয়ন করা যায়। সবাইকে সাথে নিয়ে সম্মিলিত ভাবে বন্দরের উন্নয়নে কাজ করে গেছি। এলাকার কোন সমস্যা নিয়ে আমার কাছে গেছেন আমাকে পরামর্শ দিয়েছেন আর আমি সেটা পালন করি নাই এমনটা কেউ বলতে পারবেন না। সরকারীভাবে বরাদ্দ না থাকলে আমার ব্যক্তিগত অর্থায়নে সেই সকল সমস্যা গুলো সমাধান করেছি। যেখানে সব থেকে সহযোগীতা আমি আপনাদের কাছ থেকে আওয়ামীলীগের কর্মীদের কাছ থেকে পেয়েছি। ভবিষ্যতেও আমি আপনাদের সাথে নিয়ে বন্দরের জনগনের কল্যাণে এলাকার উন্নয়নে কাজ করে যাবো। আগামীতে যদি আমি নির্বাচিত না হতে পারি তবুও আমি আপনাদের পাশেই থাকবো।
আওয়ামীলীগের মনোনয়ন এবং ৫ আসনের নৌকা প্রতীকের ব্যাপারে তিনি বলেন, আওয়ামীলীগ থেকে প্রায় ১২জন মনোনয়ন চেয়ে ছিলেন। আমি নিজেও নারায়ণগঞ্জে ৫টি আসনে নৌকা প্রতীক চেয়ে ছিলাম। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আমাকে মহাজোট থেকেই মনোনীত করেছেন। আর আওয়ামীলীগ থেকে যারা মনোনয়ন দাবী করেছেন তাদের সবাইকে আমি ধন্যবাদ জানাই। কারন আরজু ভূইয়া, শুক্কুর মাহমুদ চাচা উনারা প্রত্যেকেই আমাকে ভালবাসেন। আর ভালবাসেন বলেই উনারা কেউই জেলা রিটার্নিং অফিসারের কাছ থেকে মনোনয়নপত্র ক্রয় করেননি। কিন্তু আমি যদি বলি লাঙ্গল কি আমি এনেছি নাকি আপনারা আমাকে আনার সুযোগ করে দিয়েছেন? আপনারা কেন প্রধানমন্ত্রীকে বললেন আপা আপনি সেলিম ওসমানকে মনোনয়ন দেন কিন্তু মার্কাটা নৌকা হতে হবে। অথবা আমাকে কেন বললেন না আপনার লাঙ্গলটা আমাদের দিয়ে দেন আমরা এই আসনে আওয়ামীলীগ থেকে নৌকা মার্কায় নির্বাচন করবো। তবে আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি আগামীতে শুধু এই আসন নয় নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনেই নৌকা প্রতীকে নির্বাচন হবে।
বন্দর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা এম এ রশীদের সভাপতিত্বে মত বিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক আবু জাহের, বন্দর থানা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি মুুক্তিযোদ্ধা শফিউদ্দিন প্রধান, মহানগর জাতীয় পার্টির আহবায়ক সানাউল্ল্যাহ সানু, মহানগর আওয়ামী মহিলালীগের সভানেত্রী ইসরাত জাহান খান স্মৃতি, ১৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফয়সাল মোহাম্মদ সাগর, ২৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুদ্দিন আহাম্মেদ দুলাল প্রধান। আরো উপস্থিত ছিলেন মদনপুর ইউপি চেয়ারম্যান এম.এ সালাম, ধামগড় ইউপি চেয়ারম্যান মাছুম, মহানগর সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জুয়েল হোসেন, বন্দর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল হাসান আরিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক খান মাসুদ, মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাসনাত রহমান বিন্দু, ছাত্রলীগ নেতা মাঈনউদ্দিন মানু প্রমুখ।