নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও আওয়ামীলীগের একাংশের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন সোনারগাঁও উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান। শনিবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ নতুন কোর্ট এলাকায় অ্যাডভোকেট কামরুল আহসানের চেম্বারে দীর্ঘ এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার মনোনিত প্রার্থীকে বিজয়ী করা এবং সোনারগাঁ আওয়ামীলীগের নানা সংকট ও সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হয়।
একই সঙ্গে সোনারগাঁ আওয়ামীলীগের বর্তমান দৈনদশা নিয়েও বক্তব্য রাখেন নেতারা। এর উত্তোরণের জন্য তারা নতুন নেতৃত্ব দেখতে চান বলেও মত প্রকাশ করেন। সেই সঙ্গে সোনারগাঁয়ে আওয়ামীলীগের রাজনীতির চেয়ে ব্যক্তি রাজনীতির কারনে আজকে নৌকার প্রার্থী পাওয়া না পাওয়া নিয়ে সংকট তৈরি হয়েছে বলেও মত দেন নেতারা। তারা বলেন, কোন ক্রমেই সোনারগাঁও আওয়ামীলীগের অস্তিত্ব সংকেটের দিকে ফেলে দেয়া যাবে না। এমন পরিস্থিতিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এছাড়াও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আবারো প্রধানমন্ত্রী করতে নেতাদের করণীয় কি সেসব বিষয় নিয়েও আলোচনা করা হয়। সকলের মতামত ছিল- আগামী নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত দিবেন সেই সিদ্ধান্তে অটুট থেকে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কঠোরভাবে কাজ করে নেত্রীর নির্দেশিত প্রার্থীকে জয়ী করায় আশাবাদ ব্যক্ত করেন। নেত্রীর সিদ্ধান্তের বাহিরে যাওয়া যাবে না।
অন্যান্য বক্তারা আরও বলেন, সোনারগাঁ আসনে টানা দুইবার মহাজোটের প্রার্থী এমপি হলে সেখানে আওয়ামীলীগের অস্তিত্ব সংকটের দিকে যাবে। বিষয়টি নিয়েও নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। নৌকার প্রার্থী নিয়ে সংকট তৈরি হওয়ার কারনে নেতারা স্থানীয় নেতৃত্বে থাকা আওয়ামীলীগ নেতাদের দায়ী করেন। তাদের দাবি সোনারগাঁয়ে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক থাকার কারনেও আওয়ামীলীগে সংকট তৈরি হচ্ছে। সাংগঠনিকভাবে আওয়ামীলীগ হুমকির মুখে পড়েছে। নেতৃত্বের ব্যর্থতা দূর্বলতার কারনে ভৌগালিকভাবে গুরুত্ব এলাকা সোনারগাঁয়ে নৌকার প্রার্থী এখনও ঘোষণা করা হয়নি। হয়তো মহাজোটের প্রার্থীই চূড়ান্ত হবে। এক্ষেত্রে আওয়ামীলীগ আরও বেকায়দায় পড়বে। তবে নেত্রীর সিদ্ধান্ত মেনে তারা দলীয় প্রার্থীকে জয়ী করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অ্যাডভোকেট কামরুল আহসানের এই উদ্যোগের প্রসংশা করেন আওয়ামীলীগ নেতারা। দলের প্রয়োজনে তারা নিয়মিত এমন বৈঠকের মাধ্যমে সোনারগাঁ আওয়ামীলীগের সমস্যা নিরসনে কাজ করে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। বিভিন্ন বক্তারা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বক্তব্য রাখেন। তবে সকলের বক্তব্যেই ছিল জননেত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত দিবেন সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে তারা কাজ করবেন।
এছাড়াও বিএনপি ক্ষমতায় আসলে কঠিন পরিস্থিতির সুম্মখীন হবে সোনারগাও আওয়ামীলীগ। ২০০১ সালের পর বিএনপি জামাত জোট সরকারের নানা নির্যাতনের কথাও স্মরণ করেন তারা। ওই সময় রাজপথে আন্দোলন করতে নির্যাতনের শিকার হওয়া গাজী মুজিবুর রহমান সহ নেতাদের নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন। তাই আবারো শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসাতে হলে যে কোন ত্যাগ স্বীকার করে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন বলেও মত দেন তারা। বিএনপি জামাত জোট সরকার আমলে নির্যাতিত আওয়ামীলীগ নেতাদের পক্ষে আইনী লড়াই চালিয়ে যাওয়ায় কামরুল আহসানের প্রসংশা করেন নেতারা।
এই বৈঠকে বক্তব্য রাখেন সোনারগাঁও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও কমিউনিটি পুলিশের সভাপতি গাজী মজিবুর রহমান, সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শাহআলম রূপন, নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিরষদের সদস্য ও উপজেলা মহিলা লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট নূর জাহান বেগম, উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাইয়ের ছেলে টিপু,স্বাধীনতা শিক্ষক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোন্তাজ উদ্দীন মুর্তজা, নোয়াগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি শহিদুল্লাহ সরকার, শম্ভপুরা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক আহ্বায়ক তানভীর আহমেদ, অ্যাডভোকেট রবিউল আমিন রনি, অ্যাডভোকেট সালাউদ্দীন আহমেদ, অ্যাডভোকেট আরিফুর রহমান, অ্যাডভোকেট মনির হোসেন, অ্যাডভোকেট আল মামুন, আওয়ামীলীগ নেতা এসএম আতাউর রহমান, কাচপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা আমান খান, যুবলীগ নেতা খায়রুল ইসলাম, কাউসার আহমেদ, শ্রমিকলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মামুন আহমেদ, সাইদুর রহমান সুমন, জামপুর যুবলীগ সভাপতি মাসুদ কবির সুমন, শিশির দাস সহ সোনারগাঁয়ের পৌরসভা ও বিভিন্ন ইউনিয়নের শীর্ষ পর্যায়ের অর্ধশতাধিক নেতা।
এ বৈঠকের বিষয়ে অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান বলেন, মুলত আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমাদের নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আমাদের করণীয় কি সেই সব বিষয় নিয়ে নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। বৈঠকে উপস্থিত সকল নেতারা বলেছেন, নেত্রীর যে কোন সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে নেত্রীর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের নেত্রীর দেয়া মনোনিত প্রার্থীকে বিজয়ী করারই হবে আমাদের সকলের দায়িত্ব। এছাড়াও সোনারগাঁও আওয়ামীলীগের কার্যক্রম সহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেছি।
বৈঠক শেষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সকল শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু কামনা করে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। পরে শীর্ষ পর্যায়ের এসব নেতাদের জন্য মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান।