কায়সার হাসনাতের মার্কা সিংহ, টেনশনে লাঙ্গল

দিনকাল নারায়ণগঞ্জ ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত সিংহ প্রতীকে লড়াই করতে যাচ্ছেন। ১০ ডিসেম্বর সোমবার নারায়ণগঞ্জ জেলা রিটার্নিং অফিসার রাব্বী মিয়ার হাত থেকে সিংহ প্রতীক তুলে নেন কায়সার হাসনাত। ফলে এ আসনে মহাজোটের মনোনিত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার জয় নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন এখানে লিয়াকত হোসেন খোকার জয়ের আশাই ছেড়ে দিয়েছেন আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা। যে কারনে এখন সোনারগাঁও আওয়ামীলীগকে বাঁচাতে একটাই পথ সেটা হলো সিংহ মার্কায় ভোট দেয়া।

সোমবার প্রতীক বরাদ্ধের পর সোনারগাঁয়ের নেতাকর্মীরা বলেছেন, বাঘের হাতেই সিংক মার্কা। এ আসনে অন্তত ১০ জনের বেশি মনোনয়ন প্রত্যাশি মাঠে নেমেছিলেন। কিন্তু তারা সোনারগাঁও আওয়ামীলীগকে বাঁচাতে একাট্টা হননি। এখানে আনাড়ি ধাচের মনোনয়ন প্রত্যাশিদের ছড়াছড়ির কারনে আসনটিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আনা সম্ভব হয়নি। কিন্তু এখন সোনারগাঁয়ে আওয়ামীলীগের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে সিংহ মার্কায় ভোট দেয়া ছাড়া আওয়ামীলীগের কোন পথ খোলা নেই। মহাজোটের প্রার্থীকে নিয়েও ধানের শীষ প্রতীকের সঙ্গে লড়াই করার মত অবস্থানও নেই। ফলে কায়সার হাসনাতকে নিয়েই চিন্তা ভাবনা করছেন নেতাকর্মীরা। এছাড়াও ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ব্যক্তি হিসেবেও দূর্বল। বৃহত দল বিএনপির কারনে মুলত কায়সার হাসনাতের সঙ্গে তার লড়াইটাই দেখছেন তারা।

এখানকার নেতাকর্মীরা বলছেন, এ আসনের মহাজোটের প্রার্থী বর্তমান এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা বেশ বেকায়দায় পড়েছেন। এর আগে তিনি জাতীয়পার্টি থেকে বিনাপ্রতিদ্বন্ধিতায় এমপি হলেও এখানে ভোটের মাঠে তিনি ছিলেন না। ৫বছর এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও তিনি এখানে অবস্থান পাকাপোক্ত করতে পারেননি। যে কারনে এখানে কায়সার হাসনাত ও বিএনপির প্রার্থী আজহারুল ইসলাম মান্নানের সঙ্গেই হবে নির্বাচনের মুল লড়াই।

তবে এ আসনে ভোটের হিসেবে রয়েছে নানান হিসেবে নিকেশ। যেখানে বিএনপির প্রার্থী আজহারুল ইসলাম মান্নানের বিপক্ষে রয়েছেন এ আসনের সাবেক এমপি রেজাউল করিম ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু জাফর। এই দুইজন নেতা পুরোদমে মান্নানের পক্ষে নির্বাচনী মাঠে না থাকলে মান্নানের জয়ের সম্ভাবনা কম। যদিও খন্দকার আবু জাফর এখানে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন পেলেও তিনি মনোনয়ন পত্র দাখিলই করেননি। তিনি মান্নানের মনোনয়নের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এখানে রেজাউল করিমের বিশাল ভোট ব্যাংক রয়েছে। যার বেশির ভাগ ভোট চলে যাবে কায়সার হাসনাতের বাক্সে। কারন কায়সার যখন এমপি ছিলেন ওই সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতনের মাত্রা কমই ছিল।

এখানে আওয়ামীলীগের একটি অংশ কায়সার হাসনাতের সঙ্গে দূরত্ব রয়েছে এবং এমপি খোকা হলেন মহাজোটের প্রার্থী। সেই হিসেবে খোকার পক্ষেও থাকবে আওয়ামীলীগের একটি অংশ। তবে তিন প্রার্থীর মধ্যে কায়সার হাসনাতই সবচেয়ে বেশি এ আসনে জনপ্রিয়। সাধারণ মানুষের কাছে কায়সার হাসনাত একজন সাদা মানুষ। কায়সার হাসনাতের চাচা মোশারফ হোসেনও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করলেও তিনি আপীল করেও বৈধতা পাননি। তবে তিনি থাকবেন কায়সার হাসনাতের পক্ষেই। তিনি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও গত নির্বাচনে তিনি আওয়ামীলীগের মনোনয়নও পেয়েছিলেন।

এসব কারনে বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, এখানে মান্নানের জয় নিশ্চিত করতে হলে মাঠে নামতে হবে রেজাউল করিম ও খন্দকার আবু জাফরকে। আবার এমপি খোকার জয় নিশ্চিত করার সুযোগ ছিল কায়সার হাসনাত নির্বাচন থেকে সরে দাড়ানো। আবার রেজাউল ও জাফর পন্থীদের ভোট যদি এমপি খোকা টানতে পারেন সেক্ষেত্র খোকা কিছুটা হলেও এগিয়ে থাকবেন। তবে সকল হিসেবে নিকেশে এগিয়ে থাকছেন কায়সার হাসনাত। যদিও নির্বাচন নাগাদ এমন পরিস্থিতির অনেক কিছুই উলোটপালট হতে পারে।

তবে কায়সার হাসনাত তার মনোনয়ন পত্র দাখিলের দিন কয়েক হাজার আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে মনোনয়ন দাখিল করতে গিয়ে বলেছিলেন, আমি এমপি হতে আসিনি। আমি সোনারগাঁয়ের আওয়ামীলীগকে বাঁচাতে আসছি।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে এ আসনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পান উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামীলীগ তার মহাজোটের শরীক দল জাতীয়পার্টিকে এ আসনটি ছেড়ে দিলে মোশারফ হোসেন মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নেন। মোশারফ হোসেন কায়সার হাসনাতের আপন চাচা। ওই নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় এমপি নির্বাচিত হন লিয়াকত হোসেন খোকা।

সোনারগাঁয়ে বাঘের হাতে সিংহ মার্কা, বাঁচাও আওয়ামীলীগ

দিনকাল নারায়ণগঞ্জ ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত সিংহ প্রতীকে লড়াই করতে যাচ্ছেন। ১০ ডিসেম্বর সোমবার নারায়ণগঞ্জ জেলা রিটার্নিং অফিসার রাব্বী মিয়ার হাত থেকে সিংহ প্রতীক তুলে নেন কায়সার হাসনাত। ফলে এ আসনে মহাজোটের মনোনিত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার জয় নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন এখানে লিয়াকত হোসেন খোকার জয়ের আশাই ছেড়ে দিয়েছেন আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা। যে কারনে এখন সোনারগাঁও আওয়ামীলীগকে বাঁচাতে একটাই পথ সেটা হলো সিংহ মার্কায় ভোট দেয়া।

সোমবার প্রতীক বরাদ্ধের পর সোনারগাঁয়ের নেতাকর্মীরা বলেছেন, বাঘের হাতেই সিংক মার্কা। এ আসনে অন্তত ১০ জনের বেশি মনোনয়ন প্রত্যাশি মাঠে নেমেছিলেন। কিন্তু তারা সোনারগাঁও আওয়ামীলীগকে বাঁচাতে একাট্টা হননি। এখানে আনাড়ি ধাচের মনোনয়ন প্রত্যাশিদের ছড়াছড়ির কারনে আসনটিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আনা সম্ভব হয়নি। কিন্তু এখন সোনারগাঁয়ে আওয়ামীলীগের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে সিংহ মার্কায় ভোট দেয়া ছাড়া আওয়ামীলীগের কোন পথ খোলা নেই। মহাজোটের প্রার্থীকে নিয়েও ধানের শীষ প্রতীকের সঙ্গে লড়াই করার মত অবস্থানও নেই। ফলে কায়সার হাসনাতকে নিয়েই চিন্তা ভাবনা করছেন নেতাকর্মীরা। এছাড়াও ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ব্যক্তি হিসেবেও দূর্বল। বৃহত দল বিএনপির কারনে মুলত কায়সার হাসনাতের সঙ্গে তার লড়াইটাই দেখছেন তারা।

এখানকার নেতাকর্মীরা বলছেন, এ আসনের মহাজোটের প্রার্থী বর্তমান এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা বেশ বেকায়দায় পড়েছেন। এর আগে তিনি জাতীয়পার্টি থেকে বিনাপ্রতিদ্বন্ধিতায় এমপি হলেও এখানে ভোটের মাঠে তিনি ছিলেন না। ৫বছর এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও তিনি এখানে অবস্থান পাকাপোক্ত করতে পারেননি। যে কারনে এখানে কায়সার হাসনাত ও বিএনপির প্রার্থী আজহারুল ইসলাম মান্নানের সঙ্গেই হবে নির্বাচনের মুল লড়াই।

তবে এ আসনে ভোটের হিসেবে রয়েছে নানান হিসেবে নিকেশ। যেখানে বিএনপির প্রার্থী আজহারুল ইসলাম মান্নানের বিপক্ষে রয়েছেন এ আসনের সাবেক এমপি রেজাউল করিম ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু জাফর। এই দুইজন নেতা পুরোদমে মান্নানের পক্ষে নির্বাচনী মাঠে না থাকলে মান্নানের জয়ের সম্ভাবনা কম। যদিও খন্দকার আবু জাফর এখানে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন পেলেও তিনি মনোনয়ন পত্র দাখিলই করেননি। তিনি মান্নানের মনোনয়নের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এখানে রেজাউল করিমের বিশাল ভোট ব্যাংক রয়েছে। যার বেশির ভাগ ভোট চলে যাবে কায়সার হাসনাতের বাক্সে। কারন কায়সার যখন এমপি ছিলেন ওই সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতনের মাত্রা কমই ছিল।

এখানে আওয়ামীলীগের একটি অংশ কায়সার হাসনাতের সঙ্গে দূরত্ব রয়েছে এবং এমপি খোকা হলেন মহাজোটের প্রার্থী। সেই হিসেবে খোকার পক্ষেও থাকবে আওয়ামীলীগের একটি অংশ। তবে তিন প্রার্থীর মধ্যে কায়সার হাসনাতই সবচেয়ে বেশি এ আসনে জনপ্রিয়। সাধারণ মানুষের কাছে কায়সার হাসনাত একজন সাদা মানুষ। কায়সার হাসনাতের চাচা মোশারফ হোসেনও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করলেও তিনি আপীল করেও বৈধতা পাননি। তবে তিনি থাকবেন কায়সার হাসনাতের পক্ষেই। তিনি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও গত নির্বাচনে তিনি আওয়ামীলীগের মনোনয়নও পেয়েছিলেন।

এসব কারনে বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, এখানে মান্নানের জয় নিশ্চিত করতে হলে মাঠে নামতে হবে রেজাউল করিম ও খন্দকার আবু জাফরকে। আবার এমপি খোকার জয় নিশ্চিত করার সুযোগ ছিল কায়সার হাসনাত নির্বাচন থেকে সরে দাড়ানো। আবার রেজাউল ও জাফর পন্থীদের ভোট যদি এমপি খোকা টানতে পারেন সেক্ষেত্র খোকা কিছুটা হলেও এগিয়ে থাকবেন। তবে সকল হিসেবে নিকেশে এগিয়ে থাকছেন কায়সার হাসনাত। যদিও নির্বাচন নাগাদ এমন পরিস্থিতির অনেক কিছুই উলোটপালট হতে পারে।

তবে কায়সার হাসনাত তার মনোনয়ন পত্র দাখিলের দিন কয়েক হাজার আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে মনোনয়ন দাখিল করতে গিয়ে বলেছিলেন, আমি এমপি হতে আসিনি। আমি সোনারগাঁয়ের আওয়ামীলীগকে বাঁচাতে আসছি।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে এ আসনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পান উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামীলীগ তার মহাজোটের শরীক দল জাতীয়পার্টিকে এ আসনটি ছেড়ে দিলে মোশারফ হোসেন মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নেন। মোশারফ হোসেন কায়সার হাসনাতের আপন চাচা। ওই নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় এমপি নির্বাচিত হন লিয়াকত হোসেন খোকা।

কাজী মনিরের হাতে ধানের শীষ, বিএনপিতে কলঙ্কজনক অধ্যায়!

দিনকাল নারায়ণগঞ্জ ডটকম:

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ঢাকায় বিজেএমইএ এর প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত হয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন কাজী মনিরুজ্জামান মনির। মাসদাইরে তৈমূর আলমের বাসায় এক অনুষ্ঠানের পূর্বে ঘরোয়াভাবে নেতাকর্মীদের তিনি বলেছিলেন, বিএনপির কবর হয়ে গেছে, জানাযা বাকি। যা পরদিন মিডিয়াতে প্রকাশিত হলে দিপু ভুইয়ার লোকজন নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করে তার কুশপুত্তালিকাদাহ করেছিলেন। তাকে জেল খাটতে হয়নি। পুলিশের লাঠি পেটা খেতে হয়নি। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন করতে হয়নি। অথচ বিএনপির কাছে সেই কাজী মনিরুজ্জামান মনিরই যোগ্য প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীকে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন!

বিপরীত দিকে রাজপথে আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের লাঠি পেটা খেয়েছেন। জেল খেটেছেন। তারেক জিয়ার মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন। ২৬ মাস জেল খেটেছেন। জেলা বিএনপির রাজনীতিকে একাই সচল রেখেছিলেন। রাজপথে গুলি খেয়েছেন। সেই অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারই বিএনপির কাছে মনোনয়নের অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হলেন। ন্যাক্কাজনক এই দৃষ্টান্তের কারনে নারায়ণগঞ্জে বিএনপিতে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সৃষ্টি করে দিল বিএনপি। ভবিষৎে রাজপথে নেমে আন্দোলন সংগ্রামে কেউ ঝাপিয়ে পড়ার চেয়ে পকেট ভারি মনোনয়নের জন্য নেমে পড়বেন সেটাই হবে তাদের জন্য শ্রেয়। রাজনীতি না করে তৈমূর আলম খন্দকার তার আইন পেশায় ফুলটাইম সময় ব্যয় করে অঢেল টাকার মালিক হয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের পকেট ভারি করে মনোনয়ন কিনে আনতে পারতেন। এমনটাই অভিমত নেতাকর্মীদের।

ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা বলছেন- সেই ১৯৯৮ সালের শুরুর দিকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন তৈমূর। ওইদিন নিহত হয়েছিলেন তার পাশেই দাড়িয়ে থাকা যুবদল কর্মী ইব্রাহীম। ১/১১ এর সময় তারেক জিয়ার পক্ষে যখন কেউ মামলা পরিচালনা করতে সাহস করে এগিয়ে যায়নি তখন মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন তৈমূর। তাকে নেয়া হয় রিমান্ডে। রিমান্ডে নিয়ে তারেক জিয়া ও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে স্বাক্ষী দিতে দেয়া হয় কয়েক হাজার বোল্ডের বাতির নিচে তৈমূর আলমের মাথা। তবুও স্বাক্ষী দেয়ার কথা মেনে নেয়নি। জেল খেটেছিলেন ২৬ মাস। বিএনপি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর নারায়ণগঞ্জে বিএনপির রাজপথে বুক উচিয়ে পুলিশের লাঠির সামনে, গুলির সামনে যিনি ছিলেন তিনি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। পুলিশের লাঠির আঘাত পেঠে সহেছিলেন তিনি। গলা চেপে পুলিশ তাকে টেনে হেছড়ে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। আবারও জেল খেটেছেন। কিন্তু যেখানে একক প্রার্থী হিসেবে তৈমূর আলম খন্দকারকে ঘোষণা করা উচিত সেখানে আরো দুজন রাজপথের আন্দোলন বিমুখী নেতাদের মনোনয়ন চিঠি দেয়াটাও তৈমূর আলম খন্দকার ও তার নেতাকর্মীদের জন্য ছিল অপমানজনক। যেখানে ওই দুই মনোনিত নেতাকে কখনও কারাগারে যেতে হয়নি। পুলিশের মার খেতে হয়নি। গুলি খেতে হয়নি। সবশেষ নাটক করে বাদ দেয়া হলো তৈমূরকে। মনোনয়ন ওঠলো কাজী মনিরের হাতে যিনি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিজেএমইএর প্রতিবাদ সভায় খালেদা জিয়াকে আগুন সন্ত্রাস সহ নানা ধরনের অভিযোগ করা হয়।

এমনকি গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পরেও তার মুক্তির দাবিতে শ্লোগানই ধরতে হয়নি আজকে তাদের একজনকে দেয়া হলো ধানের শীষ। আবারো কুরবানী তৈমূর আলম খন্দকার।

নেতাকর্মীরা বলছেন- দলের প্রতি তৈমূর আলমের কমিটমেন্ট রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জয়ের সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বেগম খালেদা জিয়ার সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে নির্বাচনের সাত ঘন্টা আগে নির্বাচন থেকে সরে দাড়ান তৈমূর।

নেতাকর্মীরা আরও বলেন- সাধারণ মানুষের নেতা তৈমূর আলমকে ২৪ ঘন্টা যে কোন সময় যে কোন নেতাকর্মী সমর্থক ফোন করলে নিজ হাতে রিসিভ করে কথা বলেন তিনি। হাটে ঘাটে মাঠে রাস্তায় বসেও সাধারণ মানুষের সঙ্গে বসে খাওয়া ধাওয়া করতে পারেন। অথচ কাজী মনির নেতাকর্মীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে টিস্যূ দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে হাত মুছে নেন। অনেক সময় তার হাতে টিস্যূ বা রুমাল রেখেই মানুষের সঙ্গে হাত মিলান। যে কারনে এখানে সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয়তার দিক থেকে তৈমূর এগিয়ে। এখানে কাজী মনির ও দিপু ভুইয়া মুলত নিজেরা দলের কমিটি ও কমিটির পদ পদবীতে নিজেদের চাটুকার শ্রেণির নিস্ক্রিয় কর্মীদের পদে বসিয়ে নেতা বানানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু নির্বাচনী মাঠে তারা অবস্থান তৈরি করতে পারেননি। গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর শহর কেন্দ্রীয় একটি কর্মসূচিতেও ছিলেন না দিপু ভুইয়া। কাজী মনিরকে দু’একটি কর্মসূচিতে দেখা গেলেও তাকে ছাড়াই বাকী কর্মসূচিগুলো পালন করেছে জেলা বিএনপি। রূপগঞ্জে কাজী মনিরের পক্ষে নেতাকর্মীরা থাকলেও দিপু ভুইয়ার এমপি নির্বাচন করার মত অবস্থান নেই।

অন্যদিকে তৈমূর সম্পর্কে নেতাকর্মীরা বলছেন- বিআরটিসির চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে নিজ জিম্মায় রূপগঞ্জের কয়েকশ মানুষকে বিনা পয়সায় চাকুরী দিয়ে তিনি জেল খেটেছেন ২৬ মাস। সেই মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন। যে কারনে রূপগঞ্জে তৈমূর আলম খন্দকার হাটা শুরু করলে স্থানীয় লোকজনের সমাবেশ সৃষ্টি হয়ে যায়। তৈমূর নেতাকর্মীদের বলেছিলেন আবারো কোন দায়িত্ব পেলে কয়েক হাজার মানুষকে তিনি চাকুরী দিবেন।

২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর জেলা বিএনপির সভাপতি হন তিনি। তারপর থেকে রাজপথের আন্দোলনে ছিলেন একমাত্র তিনিই। কাজী মনির জেলা বিএনপির সেক্রেটারি পদে আসলেও তিনি হয়ে যান নিষ্ক্রিয়। ২০১১ সালের ৬ জুন তৈমূর শহরের ২নং রেলগেট এলাকায় সদর মডেল থানা পুলিশের সেকেন্ড অফিসার এসআই আতিয়ার রহমানের লাঠির মার পিঠে নিয়েছেন। চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ কোর্টের সামনে থেকে তাকে অপমানজনকভাবে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই সময়কার ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের ওসি কামালউদ্দীন তৈমূরের গলা চেপে ধরেন। তৈমূর আলমের গলা চেপে ধরে টেনেহেছড়ে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার সময় তৈমুর আলমের জিব্বাহ বের হয়ে আসলেও তাকে ছাড়েনি পুলিশ। ওসি কামাল উদ্দীনকে এএসপি পদে পদোন্নতি করা হয়েছে। তৈমূর আলম খন্দকার পুলিশি নির্যাতন, হামলা মারধর ও কারাভোগ করলেও রহস্যজনক কারনে কাজী মনির ও দিপু ভুইয়াকে জেল খাটতে হয়নি এবং রাজপথে পুুলিশের মার খেতে হয়নি।

রূপগঞ্জের সাধারণ মানুষ বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি তৈমূর আলম খন্দকার একজন আমজনতার নেতা, মেহনতি, খেটে খাওয়া, দিন মজুরের নেতা। তৈমূর আলমই পারতেন এ আসনটি বিএনপিকে উপহার দিতে। এখানে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশতে পারেন না এমন নেতাকে মানুষ ভোট দিবে না। যারা মানুষের সঙ্গে হাত মিলিয়ে টিস্যূ দিয়ে হাত মুছেন এমন নেতাকে সাধারণ মানুষ ভোট দিবে না।

বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন- তৈমূর আলমের কাছে খেটে খাওয়া মানুষ, দিন মজুর, রিক্সা চালক, ভ্যান চালকসহ সাধারণ মানুষের গুরুত্ব বেশি। তিনি রিক্সা চালক ভ্যান চালকদের নেতা ছিলেন। ছিলেন কাজের বুয়া ঝিদের নিয়েও সংগঠন করেছেন। রয়েছেন বধির সংস্থার চেয়ারম্যান। কয়েক যুগ ধরে অন্ধ প্রতিবন্ধিদের জন্য কাজ করে আসছেন। লুঙ্গি পড়া খেটে মানুষকেও তৈমূর আলম খন্দকার তার গাড়িতে ডেকে তুলেন। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় নারায়ণগঞ্জ কিংবা রূপগঞ্জের কোন সাধারণ মানুষকে দেখলেও গাড়ি থামিয়ে তার গাড়িতে তুলে নেন। কারো সাথে একবার কথা হলে কয়েক বছর পর দেখলেও তৈমূর নাম সহ চিনতে পারেন। গভীর রাতে ফোন করলেও সাধারণ মানুষের ফোন রিসিভ করেন নিজে। এসব নিয়ে অনেক নেতা নাক ছিটকালেও তৈমূর কর্ণপাত করেন না।

রূপগঞ্জের খাদুন গ্রামবাসীর পক্ষে আন্দোলনে ছিলেন তিনি। আবাসন ব্যবসায়ীরা যখন মানুষের কৃষি জম দখলে নিয়ে বালু দিয়ে ভরাট করছিল তখন আন্দোলনে নামেন তৈমূর আলম। ছিলেন না কাজী মনির কিংবা দিপু ভুইয়া। গ্রামবাসীর পক্ষে মামলার পরিচালনা ও আন্দোলন করার দায়ে তিনি মামলার আসামীও হয়েছিলেন। তবুও ভুমিদস্যুদের সাথে কোন আপোষ করেননি। কিন্তু সেই তৈমূর আলম খন্দকারই বিএনপির কাছে অযোগ্য! তার গলায় বারবার কড়াত দিয়ে ছুরি চালানোর মত করে জবাই করা হচ্ছে তার রাজনীতি।

৫টি আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের চূড়ান্ত মনোনয়ন দাখিল

দিনকাল নারায়ণগঞ্জ ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ জেলার ৫টি সংসদীয় আসনের ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা চূড়ান্ত মনোনয়ন দাখিল করেছেন। ৯ ডিসেম্বর দুপুরে প্রার্থীরা তাদের চূড়ান্ত মনোনয়নের চিঠি নারায়ণগঞ্জ জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক রাব্বী মিয়ার হাতে জমা দেন। নারায়ণগঞ্জে বিএনপিতে তিনটি আসনে প্রার্থী দিলেও একটি আসনে ছেড়ে দিয়েছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও আরেকটি আসনে নাগরিক ঐক্যকে। এদিন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে বিএনপির বিদ্র্রোহী প্রার্থী মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন তার মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নিলেও নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসনে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত তার মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।

নারায়ণগঞ্জ-১(রূপগঞ্জ) আসনের বর্তমান এমপি নৌকা প্রতীকে মনোনিত প্রার্থী গাজী গোলাম দস্তগীর। এখানে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির। প্রাথমিকভাবে চিঠি পেলেও চূড়ান্তভাবে মনোনয়ন পাননি বিএনপির মনোনিত প্রার্থী চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভুইয়া। এখানে নির্বাচনে রয়েছেন কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী মঞ্জুরুল ইসলাম চন্দন, স্বতন্ত্র হাবিবুর রহমান, ইমদাদ উল্লাহ, আজম খান। এখানে মোট ১০ জন মনোনয়ন পত্র দাখিল করেন। যাদের মধ্যে ৮ জনের মনোনয়ন বৈধ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী রেহেন আফজাল ও জাকের পার্টির প্রার্থী মাহফুজুর রহমানের মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করেন। তারা আপিলেও প্রার্থীতা ফিরে পাননি।

নারায়ণগঞ্জ-২(আড়াইহাজার) আসন থেকে আওয়ামীলীগের মনোনিত প্রার্থী বর্তমান এমপি নজরুল ইসলাম বাবু। এখানে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ। বিএনপির মনোনয়ন প্রাথমিকভাবে পেলেও বঞ্চিত হয়েছেন চাচা ভাতিজা বিএনপির মনোনিত প্রার্থী সাবেক এমপি আতাউর রহমান খান আঙ্গুর ও আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহমুদুর রহমান সুমন। নির্বাচনে রয়েছেন কমিউনিস্ট পাটির প্রার্থী হাফিজুল ইসলাম, জাকের পার্টির মুরাদ হোসেন জামাল, ইসলাম আন্দোলনের নাসির উদ্দীন।

নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসন থেকে জাতীয়পার্টির বর্তমান এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা। তাকে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য আজহারুল ইসলাম মান্নান। তবে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন পেলেও সোনারগাঁও বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু জাফর মনোনয়ন পত্রই দাখিল করেননি। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার, তরিকত ফেডারেশনের প্রার্থী মজিবুর রহমান মানিক, কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী আব্দুস সালাম বাবুল, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী সানাউল্লাহ নূরী, জেএসডির প্রার্থী ফখরুদ্দীন ইব্রাহীম, স্বতন্ত্র প্রার্থী মুরাদ হোসেন জামাল, জাকের পার্টির প্রার্থী মোস্তফা আমির ফয়সাল ও কল্যান পার্টির প্রার্থী রাশেদ ফেরদৌস। তবে বাতিল হওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মনোনিত হওয়া মোশারফ হোসেন ও এরশাদের পালিত মেয়ে অনন্যা হুসেইন মৌসুমীর মনোনয়ন আপীলেও বাতিল করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ-৪(ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের বর্তমান এমপি আওয়ামীলীগ মনোনিত প্রার্থী একেএম শামীম ওসমান। এখানে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের জেলার সভাপতি মুফতি মনির হোসেন কাসেমী। প্রাথমিকভাবে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য মুহাম্মদ শাহআলম ও জেলা বিএনপির সেক্রেটারি অধ্যাপক মামুন মাহামুদ। এখানে নির্বাচন থেকে সরে দাড়িয়েছেন বিএনপির বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন। তবে নির্বাচনে রয়েছেন জাতীয়পার্টির নেতা সালাউদ্দীন খোকা মোল্লা, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী শফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী হিমাংসু সাহা, ন্যাপের প্রার্থী ওয়াজিবুল্লাহ অজু, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের প্রার্থী সেলিম মাহামুদ, কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী ইকবাল মাহামুদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্র্টির প্রার্থী মাহামুদ হোসেন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের প্রার্থী জসিমউদ্দীন।

নারায়ণগঞ্জ-৫(শহর-বন্দর) আসনে জাতীয়পার্টির প্রার্থী বর্তমান এমপি একেএম সেলিম ওসমান। তাকেও মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি লাঙ্গল প্রতীকে লড়বেন। এখানে ধানের শীষ প্রতীকে লড়বেন নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা সাবেক এমপি এসএম আকরাম। এখানে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন বিএনপির সাবেক এমপি আবুল কালাম ও মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। তবে খোরশেদের মনোনয়ন বাতিল হলে তিনি আপিল করেননি। এখানে নির্বাচনে রয়েছেন খেলাফত মজলিসের প্রার্থী হাফেজ কবির হোসেন, সাম্যবাদী দলের প্রার্থী সাঈদ আহমেদ, বাসদের প্রার্থী আবু নাঈম খান বিপ্লব, কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী অ্যাডভোকেট মন্টু চন্দ্র ঘোষ, ইসলামিক ফ্রন্টের প্রার্থী বাহাদুর শাহ, জাকের পার্টির প্রার্থী হাসান জামাল, কল্যাণ পার্টির প্রার্থী আফতাব ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী আবুল কালাম।

কায়সার বিএসএস, বাকিরা পাঁচ ক্লাস পাস

দিনকাল নারায়ণগঞ্জ ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চূড়ান্ত প্রার্থীদের মধ্যে শিক্ষার দিকেও এগিয়ে রয়েছেন আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত। তিনি বিএসএস পাশ এবং পেশায় একজন ব্যবসায়ী।

প্রার্থীদের মধ্যে স্বশিক্ষিত মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির নেতা বর্তমান এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য আজহারুল ইসলাম মান্নান। হলফনামায় তারা দুজনই তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করেছেন স্বশিক্ষিত ও পেশায় ব্যবসায়ী।

এছাড়াও এ আসনে চূড়ান্ত প্রার্থীদের মধ্যে ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা মোঃ ছানাউল্লাহ নূরী ও বাংলাদেশ কমিউনিষ্ট পার্টির আঃ সালাম বাবুল তারাও হলফনামায় শিক্ষাগত যোগ্যতা লিখেন স্বশিক্ষিত।

এদিকে আসনের বিভিন্ন স্থানের ভোটাররা জানান, সৎ, উচ্চ শিক্ষিত ও চরিত্রবান নেতাদের গ্রহণযোগ্যতা ভোটারদের কাছে থাকলেও দলগুলি তা আমলে নেয়নি। দল এবার বেছে নিয়েছেন টাকা ও পেশী শক্তিধর প্রার্থীদের। এসব প্রার্থীরা প্রাইমেরী স্কুলের গন্ডি পেরুতেও পারেননি।

এলাকায় গ্রহণযোগ্যতা এবং তাদের চরিত্র ও শিক্ষাকে ভোটাররা প্রাধান্য দিবেন। এ ক্ষেত্রে প্রার্থীরা কোনে জোটের সঙ্গে যুক্ত এ বিবেচনা ভোটের ব্যাপারে কোনো প্রভাব পরবে না। ফলে জনপ্রিয়তার পাশাপাশি শিক্ষাগত দিক থেকেও সোনারগাঁয়ে কায়সার হাসনাত এগিয়ে।

ভবিষৎে ভুলত্রুটি হবে না, সেলিম ওসমানের প্রতিশ্রুতি

দিনকাল নারায়ণগঞ্জ ডটকম:

বিগত সাড়ে ৪ বছরে সংসদ সদস্যের দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে এলাকার উন্নয়ন কাজে অতীতের করা ভুল ত্রুটির ক্ষমা চাইতে জনগণের সামনে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছেন বলে দাবি করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। সেই সাথে ভবিষ্যতে এমন ভুল ত্রুটি আর হবেন না বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।

৯ ডিসেম্বর বিকেলে বন্দরের মদনপুর কেওঢালা এলাকায় ইউনিয়নবাসীর উদ্যোগে ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা ও দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন কথা বলেন। আলোচনা সভায় তিনি মদনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম এ সালাম এর মায়ের আত্মা মাগফেরাত ও বেহেস্ত কামনা করেন।

সকলের উদ্দেশ্যে সেলিম ওসমান বলেন, অতীতে কাজ করতে গিয়ে আমার ছোট ছোট ভুল ভ্রান্তি হয়েছে। আমি এলাকার চেয়ারম্যান মেম্বারদের মাধম্যে উন্নয়ন কাজ গুলো করেছি। এখানে সম্পূর্ন ভুলটা ছিল আমার। আমি যদি তিন মাস অন্তর অন্তর প্রতিটি ওয়ার্ডে গিয়ে আপনাদের সাথে বসে আলোচনার মাধ্যমে উন্নয়ন কাজ গুলো করতাম তাহলে হয়তো এখন আরো অনেক বেশি উন্নয়ন করা সম্ভব হতো। যে উন্নয়ন কাজ গুলো অনেক আগেই সম্পন্ন হয়েছে সেগুলো এখন এই সময়ে এসে বলতে লজ্জাবোধ করছি। আজকে আজ আমি আপনাদের সামনে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছি। আমি আপনাদের কাছে আরো একবার আপনাদের গোলামী করার সুযোগ চাই। যদি আপনারা আমাকে সেই সুযোগটি দেন তাহলে ভবিষ্যতে সরকারী উন্নয়নের পাশাপাশি আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগে উন্নয়ন কর্মকান্ডও অব্যাহত থাকবে। আর ভবিষ্যত প্রজন্মকে ভাল রাখতে যা যা করনীয় আছে তার সবটুকুই আমি করবো। শনিবারের মত আজকেও নিজের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষে এলাকার সাধারণ মানুষকে বিগত দিনের ভুল ভ্রুটি সম্পর্কে বলার অনুরোধ জানিয়ে মঞ্চে আহবান জানান এমপি সেলিম ওসমান।

এসময় মঞ্চে ১০৮ বয়সী বৃদ্ধ ভাষা সৈনিক জবেদ আলী মঞ্চে এসে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, আমি আপনার দাদা খান সাহেব ওসমান আলীর নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলনে অংশ নিয়েছি। উনিই আমার গুরু। ওসমান সাহেবের বংশের মানুষ আপনি আপনাকে দেখার অনেক ইচ্ছা আমার ছিল। আজকে সামনে দেখে অনেক খুশি হয়েছি। আপনি বন্দরে যে উন্নয়ন করেছেন তা স্বাধীনতার পর আমি আর দেখি না।

প্রতি উত্তরে এমপি সেলিম ওসমান বলেন আমি নিজেকে অনেক সৌভাগ্যবান মনে করছি উনি আমার দাদার সাথে আন্দোলন করেছেন ১০৮ বছর বয়সে এখানে দাড়িয়ে উন্নয়নের প্রশংসা করছেন এর থেকে সৌভাগ্যের আর কি হতে পারে।

এছাড়াও অত্র এলাকায় স্থানীয় একজন যুবক এমপি কাছে দাবী রেখে বলেন, আমি এই এলাকার সন্তান। এম.এ পাস করে এখনো বেকার। আমাদের এলাকায় অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। উনারা স্থানীয়দের চাকরি দেন না। বাইরের জেলা থেকে লোক এসে এখানে চাকরি করছে আর আমরা স্থানীয়রা বেকার বসে আছি। উনারা যাতে স্থানীয়দের চাকরি করার সুযোগ দেন সেই ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য আপনার কাছে দাবী রাখছি। প্রতিউত্তরে এমপি সেলিম ওসমান বলেন, শুধুমাত্র সাটির্ফিকেট দিয়ে এখন চাকরি পাওয়া সম্ভব নয়। পাশাপাশি অভিজ্ঞতা ও মেধার প্রয়োজন। আমার আপসোস হয় আমরা বিকেএমইএ এর মাধ্যমে প্রশিক্ষনের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬ হাজার শিক্ষিত যুবক-যুবকের চাকরির ব্যবস্থা করেছি। অথচ আমাদের স্থানীয়রা সেগুলোর খোঁজ রাখেন না প্রশিক্ষন নেন। নারায়ণগঞ্জে স্থানীয়রা বিনিয়োগ করবেন কিন্তু স্থানীয়রা চাকরি করতে পারবেন না সেটা হয়না। নিজেকে যোগ্যতা সম্পন্ন হিসেবে গড়ে তুলতে হবে তাহলে একজন মানুষও বেকার থাকবেন না।

মদনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম.এ সালাম এর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন জলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক আবুল জাহের, বন্দর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি এম.এ রশিদ, মহানগর আওয়ামীলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন, মহানগর জাতীয় পার্টির আহবায়ক সানাউল্লাহ সানু, জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ মোহসীন মিয়া, মদনপুর ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সভাপতি আবুল খায়ের বাশার, সাধারণ সম্পাদক গোলাপ হোসেন, জেলা আওয়ামী মহিলা লীগের সভানেত্রী ড. শিরীন বেগম, মহানগর আওয়ামী মহিলালীগের সভানেত্রী ইসরাত জাহান খান স্মৃতি, জেলা মহিলা পার্টির সভানেত্রী আঞ্জুমান আরা ভুইয়া, মহানগর যুবসংহতির সাধারণ সম্পাদক রিপন ভাওয়াল, মহানগর যুবলীগ নেতা শামসুল হাসান, মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন, বন্দর উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ছালিমা হোসেন শান্তা, সাধারণ সম্পাদক সখিনা বেগম, বন্দর উপজেলা ছাত্র সমাজের সভাপতি শফিকুল ইসলাম শফিক সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিরা।

বিশ্ব মানবাধিকার দিবসে মানব কল্যাণ পরিষদের র‌্যালী

দিনকাল নারায়ণগঞ্জ ডটকম:

বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে নারায়ণঞ্জে ৯ ডিসেম্বর রবিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ চাষাড়ায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে মানব কল্যাণ পরিষদ একটি বর্নাঢ্য র‌্যালী বের করে। বাংলাদেশ এনজিওস নেটওয়ার্ক এর আহ্বানে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এনজিও ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামাজিক সচেতনতায় র‌্যালীতে অংশ নেয়।

বাংলাদেশ এনজিওস নেটওয়ার্ক এর সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার দাসের তত্ত্বাবধানে মানব কল্যাণ পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ মান্নান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে সংগঠনের ব্যানারে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারের লাইব্রেরিয়ান এসএম মোশারফ হোসেন, আঞ্জুমান মাতৃছায়া সংস্থার সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন লিটন, অক্ষয় নারী সংঘের সভানেত্রী কাজল বেগম, কারার নির্বাহী পরিচালক মনিরুল ইসলাম মনির ও বন্দর প্রতিবন্ধী সংস্থার পরিচালক শিমু, ইউনেস্কো ক্লাব অব নারায়ণগঞ্জের সেক্রেটারী কামরুজ্জামান রনি, মানব কল্যাণ পরিষদ মহাসচিব মোঃ সাইফুল ইসলাম, প্রচার ও দপ্তর সচিব জান্নাতুল ফেরদৌস, মডেল হৃদয়, মোঃ সোলায়মান, মাহফুজা আক্তার লাবনী ও মরিয়ম আক্তার মীম প্রমুখ।

র‌্যালী পূর্ব সভায় বক্তারা বলেন, বর্তমানে চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে যা আমাদের সমাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সামাজিকভাবে সচেতনতা বৃদ্ধি করে সমাজকর্মীদের এগিয়ে যেতে হবে। সামাজিক কাজকর্ম করতে গেলে বাধা বিপত্তি আসবেই, তাই বলে থেমে থাকা যাবে না। দেশের সার্বিক উন্নয়নে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। র‌্যালীটি চাষাঢ়া শহীদ মিনার থেকে বঙ্গবন্ধু রোডের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে গলাচিপা মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।

আমার রক্তে মাংসে বিএনপি: মনির হোসাইন কাসেমী

দিনকাল নারায়ণগঞ্জ ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ-৪(ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে ঐক্যফ্রন্টের ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী মুফতি হোসাইন কাসেমী বলেছেন, আমার রক্তে মাংসে সবকিছুতেই বিএনপি। আমি আলেম হিসেবে একটি ইসলামী সংগঠনের রাজনীতি করি।

এ আসনে আওয়ামীলীগের আলোচিত নেতা এমপি একেএম শামীম ওসমানের সঙ্গে ধানের শীষ প্রতীকে লড়াই করবেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও নারায়ণগঞ্জ জেলা জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সভাপতি মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী।

মনোনয়ন জমা দিয়ে মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী সাংবাদিকদের বলেন, এখানে বিএনপির অনেক ভাল ভাল প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু জোটের স্বার্থে দেশের স্বার্থে সকলে গণতন্ত্র রক্ষায় কাজ করব এবং দেশে গণতন্ত্রের চর্চা হতে হবে। গণতন্ত্রের সুফল ঘরে ঘরে পৌছতে হবে। আমাদের সুযোগ দেয়া হলেই নির্বাচনের মাধ্যমে নির্ণয় করতে হবে, প্রমান করতে পারব জনগণ কাকে বেছে নেয়। অনেক দিন নির্বাচন হয়নি। মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগে বঞ্চিত ছিল।’

তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, বিএনপির উপর থেকে সব স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আমি যোগাযোগ করেছি। নির্বাচনী মাঠে আপনারা সকলকে দেখতে পাবেন। কারন আমি রক্তে মাংসে সবকিছুতে বিএনপির। আমি আলেম হিসেবে ইসলামী একটি সংগঠনের রাজনীতি করি। কিন্তু আমিও বিএনপির।

তিনি বলেন, যদি ৮০ ভাগ নির্বাচন সুষ্ঠ হয় তাহলে আমি এখানে জয়ী হবে আশা করি।’ এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা হেফাজত ইসলামের প্রধান সমন্বয়ক মাওলানা ফেরদৌসুর রহমান সহ কয়েকশ আলেম ওলামা। তিনিও মহানগর জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক। পিছনে জামায়াত ইসলামী ও হেফাজত ইসলামের সমর্থন এই নেতার পক্ষে রয়েছে বলেও অনেকে জানিয়েছেন।

এ আসনে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন তার মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ফলে চ্যালেঞ্জের মুখে এমপি শামীম ওসমান। গিয়াসউদ্দীন নির্বাচনী মাঠে থাকলে যে সুযোগটি শামীম ওসমানের ছিল সেটা আর রইলো না। যদিও এখানে বিএনপির হেভিওয়েট বেশ কজন মনোনয়ন প্রত্যাশিদের মধ্যে কাউকে শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন দিতে পারেনি বিএনপি। তবে ধানের শীষ প্রতীকের এই প্রার্থীর সঙ্গে শামীম ওসমানের লড়াইটা হবে সেটাই দেখছেন নেতাকর্মীরা।

আগের দিন ৮ ডিসেম্বর শনিবার ঐকফ্রন্টের পক্ষ থেকে ২০ দলীয় জোটের শরীক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতা মুফতি মনির হোসাইন কাসেমীকে মনোনয়নের চিঠি দেয়া হয়। ৯ ডিসেম্বর রবিবার দুপুরে মনির হোসাইন কাসেমী নারায়ণগঞ্জ জেলা রিটার্নিং অফিসারের কাছে তার চূড়ান্ত মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন।

এদিকে রবিবার বিকেলে এ আসনে বিএনপির বিদ্রোহী নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন তার মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। গিয়াসউদ্দীনের পক্ষে অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান মাসুম মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, দল ও দেশের স্বার্থে কেন্দ্রীয় নির্দেশে স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন তার মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

২০ দলীয় জোট এ আসনটি জমিয়তে উলামায়ে ইসলামকে ছাড় দেয়। ফলে এ আসনটিতে বিএনপির দুইজনকে মনোনিত করা হলেও তাদের মধ্যে কাউকে চূড়ান্তভাবে মনোনিত করা হয়নি। এমনকি প্রাথমিকভাবেও চিঠি পাননি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন। তবে তিনি বলেছিলেন তিনি নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত থাকবেন। কিন্তু রবিবার তার মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকা নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৪ সংসদীয় আসন। এখানে আওয়ামীলীগ মনোনয়ন পত্র দাখিল করে পরবর্তীতে শামীম ওসমানকে সমর্থন দিয়ে মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন কেন্দ্রীয় শ্রমিকলীগের শ্রমিক উন্নয়ন কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কাউসার আহমেদ পলাশ।

সূত্রমতে, এ আসনে বর্তমান এমপি আওয়ামীলীগ মনোনিত প্রার্থী একেএম শামীম ওসমান এবং বিএনপির মনোনিত প্রার্থী কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য মুহাম্মদ শাহআলম ও জেলা বিএনপির সেক্রেটারি অধ্যাপক মামুন মাহামুদ ছিলেন। প্রাথমিকভাবে তাদের মনোনিত করা হলেও চূড়ান্তভাবে বিএনপির দুই নেতাকে বাদ দিয়ে জোটের নেতা মুফতি মনির হোসাইন কাসেমীকে মনোনিত করা হয়।

এ আসনে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী শফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী হিমাংসু সাহা, ন্যাপের প্রার্থী ওয়াজিবুল্লাহ অজু, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের প্রার্থী সেলিম মাহামুদ, কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী ইকবাল মাহামুদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্র্টির প্রার্থী মাহামুদ হোসেন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার, কেন্দ্রীয় জাতীয়পার্টির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সালাউদ্দীন খোকা মোল্লার ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের প্রার্থী জসিমউদ্দীনের মনোনয়ন গত ২ ডিসেম্বর বৈধ ঘোষণা করে জেলা রিটার্নিং অফিসার রাব্বী মিয়া। তবে এখানে জোটের শরীক দলের প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের খবর পাওয়া যায়নি।

নেতাকর্মীদের সূত্রে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে এখানে আওয়ামীলীগের মনোনয়নে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় এমপি নির্বাচিত হন একেএম শামীম ওসমান। এর আগের নির্বাচনে যখন শুধুমাত্র ফতুল্লা থানা এলাকা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন ছিল ওই নির্বাচনে শামীম ওসমানের চাচী চলচিত্র নায়িকা সারাহ বেগম কবরী এখানে এমপি নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে বিএনপির মনোনিত প্রার্থী ছিলেন মুহাম্মদ শাহআলম।

এ আসনে আওয়ামীলীগ থেকে এমপি শামীম ওসমান ছাড়াও নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পত্র ক্রয় করেছিলেন কেন্দ্রীয় শ্রমিকলীগের শ্রম কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কাউসার আহমেদ পলাশ, কেন্দ্রীয় মহিলা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদা হাসনাত ও আওয়ামীলীগের উপ-কমিটির সদস্য কামাল উদ্দীন মৃধা। কিন্তু এখানে শামীম ওসমানকে এককভাবে মনোনয়ন দেয় আওয়ামীলীগ।

অন্যদিকে এ আসনের সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেন। তিনি সাংবাদিকদের কাছে অনেকটা জোর দিয়েই বলেছিলেন, আমি নির্বাচনে থাকছি এটাই সত্য।’ তিনি ২০০১ সালে কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সহ-সভাপতি পদ থেকে নির্বাচনের মাত্র ২১ দিন পূর্বে বিএনপিতে যোগদান করে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে এমপি নির্বাচিত হন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির আহ্বায়ক শিল্পপতি সফর আলী ভুইয়াকে দেয়া হলেও তার মনোনয়ন বাতিল করে শামীম ওসমানকে পরাজিত করতে আওয়ামীলীগ থেকে আসা গিয়াসউদ্দীনকে মনোনয়ন দেয় বিএনপি। ওই সময় শামীম ওসমানের সঙ্গে রাজনীতি করে আসা গিয়াসউদ্দীন শামীম ওসমানকেই পরাজিত করেন। পরবর্তীতে শামীম ওসমান দেশ ছেড়ে চলে যান এই গিয়াসের ভয়েই। গিয়াসউদ্দীন ৯ম সংসদ নির্বাচনে কারাগারে থাকায় মনোনয়ন পাননি।

এখানে ৯ম সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়েছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য শিল্পপতি মুহাম্মদ শাহআলম। তিনিও কল্যাণ পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। বিএনপিতে এসে মনোনয়ন পেলেও তিনি আওয়ামীলীগের প্রার্থী সারাহ বেগম কবরীর কাছে পরাজিত হন। তবে এ আসনে গিয়াসউদ্দীন ও শাহআলম দুজনের কেউই গত দশ বছরে রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন না। শাহআলমের নেতাকর্মীরা দাবি করেন শাহআলম কেন্দ্রীয় বিএনপির ডোনার এবং গিয়াসের নেতাকর্মীরা দাবি করেন গিয়াস যখন এমপি ছিলেন তখন যা কামিয়েছেন তার সিংহভাগ হাওয়া ভবনে পাঠিয়েছিলেন। যে কারনে এইদুজনের কেউই রাজপথে সক্রিয় ছিলেন না। একটি মানববন্ধনেও ছিলেন না এই দুই নেতা।

তবে মনোনয়ন পাওয়া জেলা বিএনপির সেক্রেটারি অধ্যাপক মামুন মাহামুদ একাধিকবার রাজপথে পুলিশের লাঠিপোটার শিকার হয়েছিলেন। বেশকবার তিনি মাসের পর মাস কারাভোগ করেছিলেন। সম্প্রতি তিনি তিন মাস কারাভোগ শেষে জামিনে বের হয়েই মনোনয়ন বোর্ডের কাছে সাক্ষাতকার দিতে যান। এ আসন থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আব্দুল হাই রাজু ও পারভেজ আহমেদ।

গত নির্বাচনের আগে এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশা নিয়ে বেশ প্রচারণায় ছিলেন ফতুল্লা থানা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টু ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাবেক পৌর প্রশাসক আবদুল মতিন প্রধান। মতিন প্রধান ইতিমধ্যে আওয়ামীলীগে যোগদান করেছেন। সেন্টু গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেননি। তিনি এখন শামীম ওসমানের পক্ষে ভোট চাচ্ছেন নিয়মিত। তিনি একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, শামীম ওসমান উন্নয়ন করে জনগণের পীর হয়ে গেছেন।’ এ নির্বাচনেও সেন্টু মনোনয়ন চেয়েছিলেন।

ফেভারিট কায়সার, শঙ্কায় মান্নান ও বিপাকে খোকা

দিনকাল নারায়ণগঞ্জ ডটকম:

৯ ডিসেম্বর ছিল মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। এদিনে নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত তার মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করেননি। ফলে এ আসনের মহাজোটের প্রার্থী বর্তমান এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা বেশ বেকায়দায় পড়েছেন। এর আগে তিনি বিনাপ্রতিদ্বন্ধিতায় এমপি হলেও এখানে ভোটের মাঠে তিনি ছিলেন না। ৫বছর এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও তিনি এখানে অবস্থান পাকাপোক্ত করতে পারেননি। যে কারনে এখানে কায়সার হাসনাত ও বিএনপির প্রার্থী আজহারুল ইসলাম মান্নানের সঙ্গেই হবে নির্বাচনের মুল লড়াই।

তবে এ আসনে ভোটের হিসেবে রয়েছে নানান হিসেবে নিকেশ। যেখানে বিএনপির প্রার্থী আজহারুল ইসলাম মান্নানের বিপক্ষে রয়েছেন এ আসনের সাবেক এমপি রেজাউল করিম ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু জাফর। এই দুইজন নেতা পুরোদমে মান্নানের পক্ষে নির্বাচনী মাঠে না থাকলে মান্নানের জয়ের সম্ভাবনা কম। যদিও খন্দকার আবু জাফর এখানে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন পেলেও তিনি মনোনয়ন পত্র দাখিলই করেননি। তিনি মান্নানের মনোনয়নের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এখানে রেজাউল করিমের বিশাল ভোট ব্যাংক রয়েছে। যার বেশির ভাগ ভোট চলে যাবে কায়সার হাসনাতের বাক্সে। কারন কায়সার যখন এমপি ছিলেন ওই সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতনের মাত্রা কমই ছিল।

এখানে আওয়ামীলীগের একটি অংশ কায়সার হাসনাতের সঙ্গে দূরত্ব রয়েছে এবং এমপি খোকা হলেন মহাজোটের প্রার্থী। সেই হিসেবে খোকার পক্ষেও থাকবে আওয়ামীলীগের একটি অংশ। তবে তিন প্রার্থীর মধ্যে কায়সার হাসনাতই সবচেয়ে বেশি এ আসনে জনপ্রিয়। সাধারণ মানুষের কাছে কায়সার হাসনাত একজন সাদা মানুষ। কায়সার হাসনাতের চাচা মোশারফ হোসেনও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করলেও তিনি আপীল করেও বৈধতা পাননি। তবে তিনি থাকবেন কায়সার হাসনাতের পক্ষেই। তিনি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও গত নির্বাচনে তিনি আওয়ামীলীগের মনোনয়নও পেয়েছিলেন।

এসব কারনে বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, এখানে মান্নানের জয় নিশ্চিত করতে হলে মাঠে নামতে হবে রেজাউল করিম ও খন্দকার আবু জাফরকে। আবার এমপি খোকার জয় নিশ্চিত করার সুযোগ ছিল কায়সার হাসনাত নির্বাচন থেকে সরে দাড়ানো। আবার রেজাউল ও জাফর পন্থীদের ভোট যদি এমপি খোকা টানতে পারেন সেক্ষেত্র খোকা কিছুটা হলেও এগিয়ে থাকবেন। তবে সকল হিসেবে নিকেশে এগিয়ে থাকছেন কায়সার হাসনাত। যদিও নির্বাচন নাগাদ এমন পরিস্থিতির অনেক কিছুই উলোটপালট হতে পারে।

তবে কায়সার হাসনাত তার মনোনয়ন পত্র দাখিলের দিন কয়েক হাজার আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে মনোনয়ন দাখিল করতে গিয়ে বলেছিলেন, আমি এমপি হতে আসিনি। আমি সোনারগাঁয়ের আওয়ামীলীগকে বাঁচাতে আসছি।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে এ আসনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পান উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামীলীগ তার মহাজোটের শরীক দল জাতীয়পার্টিকে এ আসনটি ছেড়ে দিলে মোশারফ হোসেন মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নেন। মোশারফ হোসেন কায়সার হাসনাতের আপন চাচা। ওই নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় এমপি নির্বাচিত হন লিয়াকত হোসেন খোকা।

গিয়াসের প্রত্যাহার, চ্যালেঞ্জে শামীম ওসমান

দিনকাল নারায়ণগঞ্জ ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ-৪(ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে আওয়ামীলীগের আলোচিত নেতা এমপি একেএম শামীম ওসমানের সঙ্গে ধানের শীষ প্রতীকে লড়াই করবেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও নারায়ণগঞ্জ জেলা জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সভাপতি মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী। এ আসনে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন তার মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ফলে চ্যালেঞ্জের মুখে এমপি শামীম ওসমান। গিয়াসউদ্দীন নির্বাচনী মাঠে থাকলে যে সুযোগটি শামীম ওসমানের ছিল সেটা আর রইলো না। যদিও এখানে বিএনপির হেভিওয়েট বেশ কজন মনোনয়ন প্রত্যাশিদের মধ্যে কাউকে শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন দিতে পারেনি বিএনপি।

আগের দিন ৮ ডিসেম্বর শনিবার ঐকফ্রন্টের পক্ষ থেকে ২০ দলীয় জোটের শরীক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতা মুফতি মনির হোসাইন কাসেমীকে মনোনয়নের চিঠি দেয়া হয়। ৯ ডিসেম্বর রবিবার দুপুরে মনির হোসাইন কাসেমী নারায়ণগঞ্জ জেলা রিটার্নিং অফিসারের কাছে তার চূড়ান্ত মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন।

মনোনয়ন জমা দিয়ে মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী সাংবাদিকদের বলেন, এখানে বিএনপির অনেক ভাল ভাল প্রার্থী ছিল। কিন্তু জোটের স্বার্থে দেশের স্বার্থে সকলে গণতন্ত্র রক্ষায় কাজ করব। দেশে গণতন্ত্রের চর্চা হতে হবে। গণতন্ত্রের সুফল ঘরে ঘরে পৌছতে হবে। আমাদের সুযোগ দেয়া হলেই নির্বাচনের মাধ্যমে নির্ণয় করতে হবে, প্রমান করতে পারব জনগণ কাকে বেছে নেয়। অনেক দিন নির্বাচন হয়নি। মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগে বঞ্চিত ছিল।

তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, বিএনপির উপর থেকে সব স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আমি যোগাযোগ করেছি। নির্বাচনী মাঠে আপনারা সকলকে দেখতে পাবেন। কারন আমি রক্তে মাংসে সবকিছুতে বিএনপির। আমি ইসলামী একটি সংগঠন করি। কিন্তু আমি বিএনপির।

তিনি বলেন, যদি ৮০ ভাগ নির্বাচন সুষ্ঠ হয় তাহলে আমি এখানে জয়ী হবে আশা করি।’ এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা হেফাজত ইসলামের প্রধান সমন্বয়ক মাওলানা ফেরদৌসুর রহমান সহ কয়েকশ আলেম ওলামা। তিনিও মহানগর জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক। পিছনে জামায়াত ইসলামী ও হেফাজত ইসলামের সমর্থন এই নেতার পক্ষে রয়েছে বলেও অনেকে জানিয়েছেন।

এদিকে রবিবার বিকেলে এ আসনে বিএনপির বিদ্রোহী নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন তার মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। গিয়াসউদ্দীনের পক্ষে অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান মাসুম মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, দল ও দেশের স্বার্থে কেন্দ্রীয় নির্দেশে স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন তার মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

২০ দলীয় জোট এ আসনটি জমিয়তে উলামায়ে ইসলামকে ছাড় দেয়। ফলে এ আসনটিতে বিএনপির দুইজনকে মনোনিত করা হলেও তাদের মধ্যে কাউকে চূড়ান্তভাবে মনোনিত করা হয়নি। এমনকি প্রাথমিকভাবেও চিঠি পাননি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন। তবে তিনি বলেছিলেন তিনি নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত থাকবেন। কিন্তু রবিবার তার মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকা নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৪ সংসদীয় আসন। এখানে আওয়ামীলীগ মনোনয়ন পত্র দাখিল করে পরবর্তীতে শামীম ওসমানকে সমর্থন দিয়ে মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন কেন্দ্রীয় শ্রমিকলীগের শ্রমিক উন্নয়ন কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কাউসার আহমেদ পলাশ।

সূত্রমতে, এ আসনে বর্তমান এমপি আওয়ামীলীগ মনোনিত প্রার্থী একেএম শামীম ওসমান এবং বিএনপির মনোনিত প্রার্থী কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য মুহাম্মদ শাহআলম ও জেলা বিএনপির সেক্রেটারি অধ্যাপক মামুন মাহামুদ ছিলেন। প্রাথমিকভাবে তাদের মনোনিত করা হলেও চূড়ান্তভাবে বিএনপির দুই নেতাকে বাদ দিয়ে জোটের নেতা মুফতি মনির হোসাইন কাসেমীকে মনোনিত করা হয়।

এ আসনে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী শফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী হিমাংসু সাহা, ন্যাপের প্রার্থী ওয়াজিবুল্লাহ অজু, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের প্রার্থী সেলিম মাহামুদ, কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী ইকবাল মাহামুদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্র্টির প্রার্থী মাহামুদ হোসেন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার, কেন্দ্রীয় জাতীয়পার্টির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সালাউদ্দীন খোকা মোল্লার ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের প্রার্থী জসিমউদ্দীনের মনোনয়ন গত ২ ডিসেম্বর বৈধ ঘোষণা করে জেলা রিটার্নিং অফিসার রাব্বী মিয়া। তবে এখানে জোটের শরীক দলের প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের খবর পাওয়া যায়নি।

নেতাকর্মীদের সূত্রে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে এখানে আওয়ামীলীগের মনোনয়নে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় এমপি নির্বাচিত হন একেএম শামীম ওসমান। এর আগের নির্বাচনে যখন শুধুমাত্র ফতুল্লা থানা এলাকা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন ছিল ওই নির্বাচনে শামীম ওসমানের চাচী চলচিত্র নায়িকা সারাহ বেগম কবরী এখানে এমপি নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে বিএনপির মনোনিত প্রার্থী ছিলেন মুহাম্মদ শাহআলম।

এ আসনে আওয়ামীলীগ থেকে এমপি শামীম ওসমান ছাড়াও নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পত্র ক্রয় করেছিলেন কেন্দ্রীয় শ্রমিকলীগের শ্রম কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কাউসার আহমেদ পলাশ, কেন্দ্রীয় মহিলা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদা হাসনাত ও আওয়ামীলীগের উপ-কমিটির সদস্য কামাল উদ্দীন মৃধা। কিন্তু এখানে শামীম ওসমানকে এককভাবে মনোনয়ন দেয় আওয়ামীলীগ।

অন্যদিকে এ আসনের সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেন। তিনি সাংবাদিকদের কাছে অনেকটা জোর দিয়েই বলেছিলেন, আমি নির্বাচনে থাকছি এটাই সত্য।’ তিনি ২০০১ সালে কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সহ-সভাপতি পদ থেকে নির্বাচনের মাত্র ২১ দিন পূর্বে বিএনপিতে যোগদান করে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে এমপি নির্বাচিত হন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির আহ্বায়ক শিল্পপতি সফর আলী ভুইয়াকে দেয়া হলেও তার মনোনয়ন বাতিল করে শামীম ওসমানকে পরাজিত করতে আওয়ামীলীগ থেকে আসা গিয়াসউদ্দীনকে মনোনয়ন দেয় বিএনপি। ওই সময় শামীম ওসমানের সঙ্গে রাজনীতি করে আসা গিয়াসউদ্দীন শামীম ওসমানকেই পরাজিত করেন। পরবর্তীতে শামীম ওসমান দেশ ছেড়ে চলে যান এই গিয়াসের ভয়েই। গিয়াসউদ্দীন ৯ম সংসদ নির্বাচনে কারাগারে থাকায় মনোনয়ন পাননি।

এখানে ৯ম সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়েছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য শিল্পপতি মুহাম্মদ শাহআলম। তিনিও কল্যাণ পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। বিএনপিতে এসে মনোনয়ন পেলেও তিনি আওয়ামীলীগের প্রার্থী সারাহ বেগম কবরীর কাছে পরাজিত হন। তবে এ আসনে গিয়াসউদ্দীন ও শাহআলম দুজনের কেউই গত দশ বছরে রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন না। শাহআলমের নেতাকর্মীরা দাবি করেন শাহআলম কেন্দ্রীয় বিএনপির ডোনার এবং গিয়াসের নেতাকর্মীরা দাবি করেন গিয়াস যখন এমপি ছিলেন তখন যা কামিয়েছেন তার সিংহভাগ হাওয়া ভবনে পাঠিয়েছিলেন। যে কারনে এইদুজনের কেউই রাজপথে সক্রিয় ছিলেন না। একটি মানববন্ধনেও ছিলেন না এই দুই নেতা।

তবে মনোনয়ন পাওয়া জেলা বিএনপির সেক্রেটারি অধ্যাপক মামুন মাহামুদ একাধিকবার রাজপথে পুলিশের লাঠিপোটার শিকার হয়েছিলেন। বেশকবার তিনি মাসের পর মাস কারাভোগ করেছিলেন। সম্প্রতি তিনি তিন মাস কারাভোগ শেষে জামিনে বের হয়েই মনোনয়ন বোর্ডের কাছে সাক্ষাতকার দিতে যান। এ আসন থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আব্দুল হাই রাজু ও পারভেজ আহমেদ।

গত নির্বাচনের আগে এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশা নিয়ে বেশ প্রচারণায় ছিলেন ফতুল্লা থানা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টু ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাবেক পৌর প্রশাসক আবদুল মতিন প্রধান। মতিন প্রধান ইতিমধ্যে আওয়ামীলীগে যোগদান করেছেন। সেন্টু গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেননি। তিনি এখন শামীম ওসমানের পক্ষে ভোট চাচ্ছেন নিয়মিত। তিনি একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, শামীম ওসমান উন্নয়ন করে জনগণের পীর হয়ে গেছেন।’ এ নির্বাচনেও সেন্টু মনোনয়ন চেয়েছিলেন।

সর্বশেষ সংবাদ